খালেদা জিয়ার চেয়েও আমরা বেশি বিপদে আছি। আমাদের কোনো মজুরি দেয়া হচ্ছে না, ছেড়েও দেয়া হচ্ছে না। অথচ গাড়ির জমা ঠিকই দিতে হচ্ছে। আয় না থাকলে পরিবার চলবে কীভাবে?
সোমবার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার সামনে রিকুইজিশন করে রাখা বালুভর্তি টাকের চালক জসিম উদ্দিন বলছিলেন এই কথাগুলো।
গত শনিবার রাতে গাবতলী থেকে আগারগাঁওয়ের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ট্রাকভর্তি বালু সরবরাহ করার সময় গাবতলীর ট্রাফিক সার্জেন্ট তার গাড়িটি খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার সামনে নিয়ে আসেন।
জসিম বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমাদের কেন এখানে আনা হয়েছে বা আমরা কী করবো এমন কিছুই বলেনি তারা। শুনেছি সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তারা ট্রাকগুলো নষ্ট বলে জানিয়েছেন। এটা সত্য নয়। আমরা চলে যেতে চাচ্ছি কিন্তু তারা আমাদের যেতে দিচ্ছেন না। আমাদের গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে গেছে।’
আরেক ট্রাকচালক হান্নান বাংলামেইলকে বলেন, ‘আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দরে বালি নিয়ে যাওয়ার সময় আমার ট্রাকসহ আরো দুটি ট্রাক গাবতলী থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট গুলশানে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু দুই দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমাদের ভাড়া তো দূরের কথা ছেড়েও দিচ্ছে না। খালেদা জিয়ার কর্মসূচি মোকাবেলা করতে আমাদের আনা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না। কারো সঙ্গে কথাও বলতে দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্টে আছি। একদিন কাজ করতে না পারলে পরিবারের খাবার জোগার করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু এখনো আমাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে না।’
শুধু জসিম আর হান্নান নয়, তাদের সঙ্গে ট্রাকসহ আটকা আছেন আরো তিন চালক।
এসব ট্রাকের চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গছে, বিরোধী দলের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি প্রতিহত করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তারাও বিপদে আছেন। খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বের হতে না দেয়ার জন্য তাদের ট্রাকগুলো দিয়ে বাড়ির সামেনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব ট্রাকের ভাড়াতো দূরে কথা, খাবারের টাকাও দেয়া হচ্ছে না। পুলিশের খাবার থেকে তাদেরও কিছু খেতে দেয়া হচ্ছে মাত্র।
শনিবার রাত থেকে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। একইসঙ্গে তার প্রটোকল প্রত্যাহার করা হয়। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে তার বাসার সামনের রাস্তায় শনিবার রাত থেকে পাঁচটি বালুবোঝাই ট্রাক এনে দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।
এভাবে রিকুইজিশন করে ট্রাক আটকে রেখে সরকারের উদ্দেশ্য পূরণ হলেও এই গরিব চালকদের পেটে লাথি মারা হয়েছে। অরাজকতা ঠেকাতে বিরোধী নেতাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে এমন যুক্তি রাজনীতিতে টিকলেও গরিব ট্রাক চালকের অন্ন কেড়ে নেয়ার অধিকার তো প্রশাসনকে কেউ দেয়নি।
সর্বশেষ জানা গেছে, রিকুইজিশনের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সোমবার রাতে ওই পাঁচটি ট্রাক ছেড়ে দিয়ে নতুন করে আবার পাঁচটি বালুভর্তি ট্রাক আনা হয়েছে। ফলে প্রথম পাঁচ জন দুই দিন পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু কপাল পুড়লো আরো পাঁচ জনের।