সিএমএইচএ সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদকে আটক রেখে জাতীয় পার্টি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের হাওলায় (জিম্মায়) রয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে এ কাজ করেছে গণভবনের এইচ টি ইমাম। আর ওই ব্যক্তির পরামর্শে দলের মহাসচিব হিসেবে হাওলাদার দুই কুল (পাতানো নির্বাচনে প্রার্থী থেকে সরকারের ইচ্ছাপূরণ এবং এরশাদকেও খুশি রাখা) রক্ষা করে দলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করছেন। তিনি একদিকে দলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের শান্ত রাখার জন্য আমি ‘নির্বাচনে নেই’ প্রচার করছেন। অন্যদিকে, সরকারকে বোঝাচ্ছেন আমি নির্বাচনে রয়েছি এবং আমার স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্না বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে দলীয় প্রার্থীদের লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে পত্র পাঠিয়েছেন। কৌশলী এ অবস্থান শক্ত রাখতে এরশাদের প্রেস সচিব শুনীল শুভ রায়কে (্এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে খুলনা-১ সমঝোতা করে বিজয় নিশ্চিত করেছেন) সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। আর একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার নীল নকশা অনুযায়ী তারা জাপার ব্যানারে ভোটযুদ্ধে রয়ে গেছেন। এরশাদ নির্বাচন বর্জন করেছেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে যারা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে রয়েছেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সব ধরনের সহায়তা করছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সরকারের ইন্ধনে রুহুল আমিন হাওলাদার জাতীয় পার্টিকে ভোটে রাখতে এরশাদকে ব্লাকমেইল করছেন। দলকে গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করছেন। এমনকি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় দেশবাসীর কাছে এরশাদের যে দেশপ্রেমী ইমেজ তৈরি হয়েছে সেটাকে ধ্বংস করতেই এরশাদের গলফ খেলার ছবি পত্রিকায় সরবরাহ করেছেন।
পহেলা জানুয়ারী জাতীয় পার্টির ২৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে গুলশানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ সভা নিয়ে দলের নেতকার্মীদের তেমন আগ্রহ নেই হাওলাদারের দ্বিমুখী ভূমিকার কারণে। একজন নেতা বললেন, রুহুল আমিন হাওলাদার দুদিকেই খেলছেন। সুবিধাবাদী এই নেতা এরশাদের সর্বনাশ করছেন। দলের নেতকর্মীরা এটা বোঝেন তবে এরশাদ আটক থাকায় তারা তেমন কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না। উল্লেখ্য, এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় ১২ ডিসেম্বর তাকে আটক করা হয়। অতঃপর গণভবন জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিতে তৎপর হয়ে উঠে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী চেষ্টা করেও এরশাদকে নির্বাচনে নেয়ার ব্যাপারে ম্যানেজ করতে না পারায় রওশন এরশাদের নেতৃত্বে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নেয়ার চেষ্টা করে। এইচ এম এরশাদ দীর্ঘদিন আটক থাকার পরও নির্বাচনে যাবেন না সিদ্ধান্তে অটল থাকায় নেতাকর্মীরা গার্জেনহীন হয়ে পড়েন। জিএম কাদের ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে দলের মুখপাত্র করার নির্দেশনা দেয়ার পর ভাই জিএম কাদের এরশাদের পক্ষে চলে যান। কিন্তু রুহুল আমিন হাওলাদার সুকৌশলে দু’পক্ষেই তাল দিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে দলীয় নেতাকর্মীদের চাপে লুকিয়ে থাকছেন; আবার সরকারের ইচ্ছায় এরশাদের সঙ্গে দেখা করছেন। সরকারী দলের ইন্ধনে এরশাদের ইমেজ নষ্ট করার জন্য আটক এরশাদের গলফ খেলার ছবি পত্রিকায় সরবরাহ করছে।
সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মুক্তির দাবিতে বৃহত্তর রংপুরের ৫ জেলা, সুনামগঞ্জ, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, সিলেট, রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় একাধিক দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করা হয়। কয়েকটি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এরশাদ মুক্তি আন্দোলন জোরদার করতে কেন্দ্রের নির্দেশনা চায়। আবার নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের কয়েকটি জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কেন্দ্র থেকে ওইসব আন্দোলনমুখী নেতারা কোনো দিক নির্দেশনা পাচ্ছে না। বরং তারা দলের মহাসচিবের চাতুর্যপূর্ণ কৌশল দেখে হতাশ। এমনকি এরশাদের নির্দেশ অমান্য করার কারণে রংপুর জেলা ও শহর কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নতুন আহবায়ক কমিটি এরশাদ মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে। অথচ কেন্দ্র থেকে হঠাৎ প্রচার করা হয় এরশাদ রংপুরের নতুন কমিটি ভেঙ্গে দিয়েছেন। এধরনের খবর শুনে রংপুরের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, পহেলা জানুয়ারী দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় যদি এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া না হয় তাহলে তারা মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরানোর দাবিতে আন্দোলনে নামবেন। এ ব্যাপারে আটক এরশাদকে ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, এরশাদের জাতীয় পার্টি মহাসচিব পদে থাকায় রুহুল আমিন হাওলাদারের (জিম্মায়) হাওলায় চলে গেছে। এরশাদ আটকের সুযোগ নিয়ে তিনি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে স্ত্রীসহ দুজন এমপি হচ্ছেন। অথচ নেতাকর্মীদের বোঝাচ্ছেন তিনি এরশাদের পক্ষে রয়েছেন। নির্বাচন বর্জন করার পর চলমান আন্দোলনে জাতীয় পার্টি কেন নেই সে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। দলের প্রেসিডিয়ামের এক প্রভাবশালী সদস্য বলেন, হাওলাদার সুবিধাবাদী চরিত্র। এরশাদের ইমেজ ধ্বংস করে তিনি সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন।