সরকারি কেনাকাটায় ব্যাপক তোড়জোড়

0
126
Print Friendly, PDF & Email

অস্বাভাবিকভাবে সরকারি কেনাকাটা বেড়ে গেছে। গত ছয় মাসে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকার ১৩০টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
নির্বাচনকালীন সরকার শুরু হওয়ার দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৩ অক্টোবর থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত দুই মাস পাঁচ দিনে ক্রয় কমিটি অনুমোদন দিয়েছে ৭৫টি প্রস্তাব। এতে ব্যয় হবে ছয় হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ গতকালের ক্রয় কমিটির বৈঠকে ১৬টি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এতে ব্যয় হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
নির্বাচনকালীন সরকারের এই সময়ে কেন এত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে—বৈঠক শেষে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, একনেক বৈঠক হচ্ছে না, তবে ক্রয় কমিটির বৈঠক হতেই হবে। কী কেনাকাটা করা হচ্ছে, সেটা হলো আসল বিষয়।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। আর এটা আমি শুরু করি নাই। আগে ছিল কি না জানি না, তবে এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুরু হয়েছে।’ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই বলে তিনি মনে করেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ১২টি ক্রয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সময়ে অনুমোদিত হয়েছে ১৩০টি প্রস্তাব।
এর মধ্যে ২৩ অক্টোবর অনুমোদিত হয়েছিল ২০টি প্রস্তাব। অর্থমন্ত্রী সেদিন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ক্রয় কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব অনুমোদনের সংখ্যার দিক থেকে বর্তমান সরকারের আমলে এটিই রেকর্ড।
অবশ্য সেই রেকর্ড ভেঙে ২৩টি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে গত ১৪ নভেম্বর। ওই বৈঠকে ২৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল।
জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির দুটি বৈঠক ও একটি সার্কুলারে ২১টি, আগস্টে এক বৈঠকে নয়টি, সেপ্টেম্বরে তিন বৈঠকে ২৪টি, অক্টোবরে একটি সার্কুলারসহ ২১টি এবং নভেম্বরে দুই বৈঠকে ৩৫টি এবং ডিসেম্বরে দুই বৈঠকে ২০টি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।
গত দুই মাসে খাদ্যপণ্য ও সারের পাশাপাশি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পাঁচ বছর করে সরকারের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিসংক্রান্ত প্রস্তাবই বেশি। তবে ছয় মাসের মোট ব্যয় নয় হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই হবে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সরকারের চুক্তির মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। তার পরও তড়িঘড়ি করে আরও পাঁচ বছর করে বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০০৮ সালের ৩ এপ্রিল জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী এককভাবে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রস্তাবের জন্য ক্রয় কমিটির অনুমোদন নিতে হয়।
ক্রয় কমিটির গতকালের বৈঠকে দুটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর করে বৃদ্ধিসহ অন্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ৫০ হাজার টন গম, এক লাখ ৭৫ হাজার টন সার, নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, ঈশ্বরদী থেকে দর্শনা পর্যন্ত ১১টি রেলস্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়নে ঠিকাদার নিয়োগ, দেড় কোটি পিস বস্তা কেনা ইত্যাদি।
এদিকে, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। এতে চারটি বিষয় অনুমোদিত হয়। কানাডা থেকে সার কেনা, এক কোটি ৬০ লাখ ডলারের বিনিময়ে কোকাকোলা ও তাবানি বেভারেজের মধ্যকার ব্যবসায়িক চুক্তির অবসান এবং চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা রেলস্টেশনের পাশে রেলওয়ের অব্যবহূত জমিতে শপিংমল কাম গেস্টহাউস নির্মাণ।
তাবানি বেভারেজের সঙ্গে কোকাকোলা কোম্পানির ঝুলে থাকা বিষয়টির নিষ্পত্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের এটাই প্রথম অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা। কানাডা থেকে সার কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকটি করতে হয়েছে। কারণ, তারা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।

শেয়ার করুন