রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে বিশ্বের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কূটনৈতিক উদ্যোগের ব্যর্থতার পর বাণিজ্য আর ভূ-রাজনৈতিক সম্ভাবনার বাংলাদেশের এখন আন্তর্জাতিক রোষের মুখোমুখি। দরিদ্র বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে উচ্চমূল্য। আন্তর্জাতিক অবরোধের মতো নিষেধাজ্ঞার খড়গ এখন সামনে। বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ আজ এক রক্তাক্ত জনপদের নাম। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ডাকা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। খবরটি ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত সব দেশের সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট এবং বিরোধী দলের ওপর সরকারের দমন-নিপীড়নের সংবাদ ও ছবি। এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে আগামী ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথ দেশসমূহ পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয় উঠে এসেছে। সেই সাথে সুপ্রিমকোর্টের ফটকে আইনজীবীদের ওপর পুলিশের হামলা এবং সরকারি দলের সমর্থকদের হাতে বিরোধী দল সমর্থক নারী আইনজীবীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের ছবিও গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে।
কলিকাতা থেকে প্রকাশিত আজকাল পত্রিকার প্রধান সংবাদের শিরোনাম ছিল, বাংলাদেশে প্রায় গৃহযুদ্ধ। এতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ভুয়া ভোটের দিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর সংবাদটির এক স্থানে বলা হয়েছে, ঢাকায় যা দেখা গেল তা প্রায় গৃহযুদ্ধই। হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে বিরোধী দল নেত্রী ভার্চুয়াল হাউজ এরেস্ট এ আছেন। দ্য হিন্দুর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিরোধী দলের গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ব্যর্থ হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী গালফ নিউজে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামানের বরাতে বলা হয়েছে যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আমরা একটি অগণতান্ত্রিক সরকার পাচ্ছি। ফলে আমরা আরো সংঘাতের মুখোমুখি হবো।
কমনওয়েলথের ৮২টি দেশ বাংলাদেশ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে যেখানে সন্দিহান এবং বিরোধী পক্ষ অনুপস্থিত এ অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে যদি রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত থাকে তবে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবার আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লার মতে, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথের পর্যবেক্ষকদের অনুপস্থিতি আমাদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত।
গালফ নিউজের সংবাদটিতে আরো বলা হয় যে, এ অবস্থায় বাংলাদেশ যে সব দেশগুলো থেকে রফতানির ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়ে থাকে তা হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ করে ইইউ’র দেশগুলোতে বাংলাদেশ ডিউটি ফ্রি সুবিধা ভোগ করে থাকে। বাংলাদেশের বার্ষিক রফতানি খাতের রাজস্বে^র বড় অংশ আসে পশ্চিমা এবং ইইউ বাণিজ্য অঞ্চল থেকে। যা প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এর শতকরা আশি ভাগ আসে গার্মেন্ট খাত থেকে। যেখানে বাংলাদেশের ৪০ লাখ লোক কাজ করে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের ‘পলিটিক্যাল ক্ল্যাশেস গ্রো ইন বাংলাদেশেস ক্যাপিট্যাল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ কিউ ইসলামের এক নিবন্ধের উদ্ধৃতি দেয়া হয়। নিবন্ধে বলা হয়, ক্ষমতাসীন দলের সমস্যা হলো এই যে, তাদের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব এটি ভোটাররা বিশ্বাস করে না।
তিনি আরো বলেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দিয়েছেন এতে তার জোটের অংশীদারদেরও তিনি প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কেউ কেউ তাকে ছেড়ে গেছেন। এ অবস্থায় তার সমস্যা এখন বহুগুণ বেড়ে গেছে।