আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিডি, টিআইবি, আসক ও সুজন। এই চারটি সংস্থা আয়োজিত গত শনিবারের ‘সংকটে বাংলাদেশ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে আওয়ামী লীগের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি সৈয়দ আশরাফের এ বক্তব্য সঠিক নয় বলে জানিয়ে রোববার রাতে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রোববার অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি, আসক, টিআইবি ও সুজন কর্তৃক আয়োজিত শনিবারের সংলাপে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সবার জ্ঞাতার্থে আয়োজনকারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত তথ্য উপস্থাপন করা হলো-
আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের সাথে টেলিফোনে গত ২৪ ডিসেম্বর সংলাপে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করলে তিনি সম্মতি দেন। পরে ২৫ ডিসেম্বর তিনি সংলাপের দিন নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের কথা থাকায় তার অপারগতা প্রকাশ করেন। সিপিডির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীকে সংলাপে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস ও মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে সম্মতি দেন।
এছাড়া ইমেইল, এসএমএস বা সরাসরি ফোনের মাধ্যমে আরও যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের মধ্যে আছেন- সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোহাম্মদ নাসিম, মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ (বীরউত্তম), আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুস শহিদ. লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবের হোসেন চৌধুরী, মেহের আফরোজ চুমকী, অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী, আসাদুজ্জামান নূর, ইসরাফিল আলম, সাগুফতা ইয়াসমিন এবং এ কে এম মায়ীদুল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সংলাপে উপস্থিত থাকতে সম্মত হন। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে তার বিমান চট্টগ্রাম থেকে ২৭ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় অবতরণ করতে না পারায় তিনি অংশ নিতে পারেননি।
অতএব, সিপিডি, আসক, টিআইবি ও সুজন আয়োজিত শনিবারের সংলাপে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি- এ বক্তব্যটি সঠিক নয়।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যৌথ উদ্যোগে ‘সঙ্কটে বাংলাদেশ-নাগরিক ভাবনা’ বিষয়ক আলোচনা সভার আয়েজন করে।
এ সভায় বক্তারা আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় একতরফা নির্বাচন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে এ সংসদের মেয়াদ শেষের নব্বই দিনের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এতে উপস্থিত ছিলেন- কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, তপন কুমার চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞানী ড. পিয়াস করিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ।
রোববার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ অভিযোগ করেন, এ আলোচনা সভাটি সম্পূর্ণ দলীয়। এখানে যারা ছিলেন তারা চিহ্নিত।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সভায় অংশগ্রহণকারীদের একএগারোর কুশীলব বলে অভিহিত করেন।