বন্যা কবলিত এলাকায় এসেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। উদ্দেশ্য, দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হালচাল জানার চেষ্টা। কিন্তু সেখানেই তাঁকে ছেঁকে ধরেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশাসনের বিরুদ্ধে এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তাঁরা।
ভারতের বন্যা-বিধ্বস্ত কোনও রাজ্যের ছবি নয়। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে। গত কয়েক দিনের ঝড় ও বৃষ্টিতে দক্ষিণ ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিপর্যস্ত। দশ হাজার বাড়ি বিদ্যুৎহীন। বহু এলাকা এখনও জলের তলায়। কোনও কোনও এলাকায় তো গত সোমবার থেকে আলো নেই।
পরিস্থিতি সামলাতে গত কালই আসরে নেমেছিলেন ক্যামেরন। ঝড়-বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত ইংল্যান্ডের কাউন্টি কেন্টের ইয়ালডিং গ্রামে গিয়েছিলেন ক্যামেরন। বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখেন। কথা বলতে যান স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। আর এখানেই বাধে বিপত্তি। প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা। হতচকিত প্রধানমন্ত্রীকে “দেখছি কী করা যায়” গোছের উত্তর দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
চলছে সাফাইয়ের কাজ। কেন্টের ইয়ালডিং গ্রামে দেখলেন ক্যামেরন। ছবি: এএফপি।
গত চার দিন ধরে আলো নেই ইয়ালডিংয়ের বাসিন্দা এরিকা ওলিভারেসের বাড়িতে। বন্যার জল তাঁর বাড়ির একতলা পুরো দখল করে রেখেছে। বড়দিন উপলক্ষে বাড়ি যেটুকু সাজিয়েছিলেন, সবই আক্ষরিক অর্থে জলে গিয়েছে। কাল প্রধানমন্ত্রীর রেঞ্জ রোভার যখন ইয়ালডিংয়ে ঢুকছে, তখন আর নিজেকে সামলাতে পারেননি বছর উনপঞ্চাশের এরিকা। ক্যামেরনের প্রতি তাঁর অভিযোগ, “বিপদের সময় যখন কাউন্সিলের (স্থানীয় প্রশাসন) দ্বারস্থ হয়েছি, তারা ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” প্রবল অস্বস্তির মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রীও অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, কাউন্সিলের সঙ্গে তিনি খুব শীঘ্রই যোগাযোগ করবেন। প্রায় একই সুর শন ম্যাথিউজ আর স্যালি পসনের মুখেও। শন তো জানিয়েছেন, বড়দিনের সকালে এক বুক জল ঠেলে আটকে পড়া লোক জনকে তিনি নিজে উদ্ধার করেছেন। প্রশাসনের কোনও সাহায্য পাননি।
স্যালির অভিযোগ আরও মারাত্মক। তাঁর কথায়, “যত ক্ষণ প্রধানমন্ত্রী আসেননি, আমাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। যেই মুহূর্তে তাঁর সফরসূচি স্থির হয়েছে, কাউন্সিলের লোকজন আর পুলিশ এসে এখানে ভিড় বাড়িয়েছে। সব লোকদেখানো।”
এরই মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে বিদ্যুৎ সংস্থার বিরুদ্ধেও। গ্রাহক ক্ষোভে রাশ টানতে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমেছে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম বিদ্যুৎ সংস্থা ‘ইউ কে পাওয়ার নেটওয়ার্কস’। তারা জানিয়ে দিয়েছে, যে সমস্ত বাড়িতে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ নেই, সেই গ্রাহকরা ৭৫ পাউন্ড করে ক্ষতিপূরণ পাবেন। সেই সঙ্গেই তাদের দাবি, তাদের ইঞ্জিনিয়াররা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে এনেছেন। বন্যার জন্য সেখানে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না, সেই সব এলাকাই এখনও পর্যন্ত অন্ধকারে ডুবে।
তবে রেল ও সড়ক পরিষেবা এখনও পর্যন্ত সেই তিমিরেই। বেশ কিছু এলাকায় রেললাইন এখনও জলের তলায়। সড়কগুলিও পরিবহণের অযোগ্য হয়ে আছে। রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। পুলিশ জানাচ্ছে, বন্যার জল না-নামা পর্যন্ত কিছুই করা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার সন্ধে থেকে আবহাওয়া ফের খারাপ হতে পারে। ফলে মাটি হতে পারে বর্ষবরণের উৎসবও।