নবম সংসদ নির্বাচনের আগে বাড়ি-গাড়ি ছিল না। নিজের আয় ও সম্পদ-সম্পত্তি ছিল সামান্য। পাঁচ বছরে কিনেছেন কোটি টাকার বাড়ি-গাড়ি। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামাতেই এ তথ্য দিয়েছেন মাগুরা-২ (শালিখা, মহম্মদপুর ও সদরের একাংশ) আসনের সাংসদ বীরেন শিকদার।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় বীরেন শিকদার উল্লেখ করেন, আইন পেশা থেকে তিনি বছরে আয় করেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২০ বিঘা জমি থেকে বছরে ৫২ হাজার এবং বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। দুই ভাই বিমলেন্দু শিকদার ও বিবেকানন্দ শিকদারের বার্ষিক আয় যথাক্রমে এক লাখ ৯৫ হাজার ও এক লাখ ৭৭ হাজার ৭০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে দুই লাখ ও স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে ৬৫ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৪১ হাজার ৬৯০ টাকা থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। নিজের কোনো মোটরযান না থাকলেও বিমলেন্দু শিকদারের ৮৫ হাজার টাকা দামের একটি পুরোনো জিপগাড়ি ও বিবেকানন্দ শিকদারের এক লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল ২৫ শতাংশ কৃষিজমি। এ ছাড়া ১০ শতাংশ যৌথ মালিকানার অকৃষি জমি ছিল। মাগুরা শহরে যৌথ মালিকানার দ্বিতল বাড়ি ও শালিখার সিংড়া গ্রামে আরেকটি পাকা বাড়ি রয়েছে।
এবারের হলফনামায় বীরেন শিকদার উল্লেখ করেন, আগের সম্পদ-সম্পত্তি ছাড়াও তিনি ঢাকার উত্তরায় এক কোটি পাঁচ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। শুল্কমুক্ত সুবিধায় টয়োটা গাড়ি কিনেছেন ৬৫ লক্ষাধিক টাকায়। ৭০ শতাংশ যৌথ মালিকানার জমি হয়েছে। তবে জমিটি কোথায় বা দাম কত, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে এবার তিনি তাঁর ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পত্তির তথ্য দেননি।
হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পত্তি ছাড়াও বীরেন শিকদারের আরও সম্পদ রয়েছে। শহরের এমআর রোডে শিকদার মেডিকেল নামের ওষুধের দোকান ও সনোপ্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। রয়েছে ইউনিওয়ার্ল্ড বিডি লিমিটেড নামের একটি গার্মেন্টস। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন বিবেকানন্দ শিকদার ও বিপুল শিকদার। শহরের সৈয়দ আতর আলী সড়কে রেড স্টাইল নামে বড় একটি তৈরি পোশাকের দোকান রয়েছে সাংসদের ছেলের। বিমলেন্দু শিকদার পাঁচ বছরে কয়েক কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ করেছেন।
এ বিষয়ে বীরেন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ নিয়ে তিনি গাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। ভাইয়েরা আলাদাভাবে ব্যবসা করেন, করও দেন। তাই তাঁদের বিষয়টি হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বীরেন শিকদার নিয়ম ভেঙে চারটির জায়গায় নয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়েছেন। গত পাঁচ বছরে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৭৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার তথ্য জানা গেছে। প্রতিটি নিয়োগে চার থেকে নয় লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া সাংসদের ভাই বিমলেন্দু শিকদার দুটি কলেজসহ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি। এখানে গত পাঁচ বছরে কয়েক কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য হয়েছে।
জানতে চাইলে বীরেন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়োগের জন্য একটি কমিটি থাকে। এককভাবে নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ আমার নেই।’