সারা দেশে আটক সাড়ে ছয় শ

0
125
Print Friendly, PDF & Email

রাজধানীসহ সারা দেশে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত সাড়ে ছয় শ ব্যক্তিকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এঁদের বেশির ভাগকেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ঢাকায় আটক করা ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০৫ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। এঁদের ৫০ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার গভীর রাতে তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২০৩ জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আটক করা ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের পর নির্দোষ প্রমাণ পেলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, সদরঘাট টার্মিনালে গতকাল ভোর চারটা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা লঞ্চে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১০ যাত্রীকে আটক করে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মিরপুর থেকে আটক করা ১৩২ জনের মধ্যে কয়েকজনকে মুক্তি দেওয়া হলেও অন্যদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই রাতে পাইকপাড়া থেকে পুলিশ সাবেক কমিশনার রুনু আক্তারের ছেলে, মেয়ে ও বাসার তত্ত্বাবধায়ককে আটক করে। রাতেই ছেলে ও মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তত্ত্বাবধায়ক সামিউরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
একই রাতে মধ্য মণিপুরের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সভাপতি মামুন হাসানের ভাই মাহবুব হাসানের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে আটক করে পুলিশ। পরদিন তাঁদের জন্য থানায় খাবার নিয়ে গেলে মামুনের বোন আজিজুন্নেছা রুমাকেও আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে মাহবুবের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আজিজুন্নেছাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২০ জেলায় আটক ৪০৮: রাজধানীর বাইরে ২০ জেলায় অভিযান চালিয়ে ৪০৮ জনকে আটক করা হয়েছে। ঢাকার ধামরাই পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন, ধামরাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসিন, শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জবেদ আলী, সাভার পৌরসভার কাউন্সিলর ও ঢাকা জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
বাগেরহাটে জামায়াত-শিবিরের তিন কর্মী গ্রেপ্তার হন। ১৫ ডিসেম্বর জেলার দেওয়ালবাটি গ্রামে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের ১৬ কর্মী।
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় আটক হয়েছেন ৩৪ জন। এঁদের মধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৫ জন এবং জামায়াত-শিবিরের ১৯ জন রয়েছেন। খুলনা নগরে আটক হন বিএনপির সাত নেতা-কর্মী। এঁদের মধ্যে সদর থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সমবায় সম্পাদক শাহীন মুন্সি রয়েছেন।
বগুড়ায় যৌথ বাহিনী আরও ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তোফায়েল আহমদ, উপজেলা যুবদলের সদস্য আনোয়ার হোসেন ও শাহীন আহমদ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। লালমনিরহাটে গ্রেপ্তার হলেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান।
রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা পদ্মা এক্সপ্রেস ও নীলফামারী থেকে আসা নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি গতকাল সকালে টাঙ্গাইলে পৌঁছালে পুলিশ মাইকে ঘোষণা দিয়ে যাত্রীদের নেমে যেতে বলে। পরে সন্দেহজনক ৯৭ যাত্রীকে আটক করা হয়।
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার হন শিবিরের কর্মী মুকুল হোসেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার ক্ষেত্রপাড়ার ঠাকুরবাড়ি এলাকায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ চলাকালে তাঁর ডান পায়ে গুলি লাগে।
সাতক্ষীরায় সহিংসতার মামলার আসামি জামায়াতে ইসলামীর নেতা সেলিম রেজা মোল্লাকে গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ গতকাল সন্ধ্যায় শহরতলির গোবরা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে। যশোরে নাশকতার আশঙ্কা ও বিভিন্ন মামলায় ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। ফেনীতে আটক হন বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতা-কর্মী। এঁদের মধ্যে সদর উপজেলায় ছয়জন, সোনাগাজীতে সাত, পরশুরামে এক ও ফুলগাজীতে একজন। ময়মনসিংহ সদর ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো থেকে বিএনপি-জামায়াতের ২৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় গ্রেপ্তার হন বিএনপি-জামায়াতের ১২ নেতা-কর্মী।
ভোলায় ৪০ জন, নাটোরের লালপুরে ১০, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পাঁচ ও সীতাকুণ্ডে ১৩, সুনামগঞ্জ শহরে ছয়, লক্ষ্মীপুরের চার উপজেলায় আট, নেত্রকোনা সদর ও পূর্বধলায় ১২ জন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন।

শেয়ার করুন