‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার মুখে বাড়ি থেকে বের হতে না পেরে গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে বলে পুলিশ সদস্যদের হুমকি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। কর্মসূচিতে যোগ দিতে নয়াপল্টনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলেও বাধার মুখে তাঁকে গাড়ি থেকে নেমে ঘরে ফিরতে হয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষোভ প্রকাশের একপর্যায়ে তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশ কোথায়? গোপালী? গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে। গোপালগঞ্জের নামই থাকবে না। যাঁরা এসব করছেন, আপনাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে।’
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আপনাদের অফিসার কোথায়? এতক্ষণ তো অনেক কথা বলেছেন….মুখটা বন্ধ কেন এখন? গোপালগঞ্জের জেলার নামই বদলে যাবে। গোপালগঞ্জ আর থাকবে না। … ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করল। সেদিন হাসিনা কোথায় ছিল? সেদিন হাসিনার এই ফোর্স কোথায় ছিল? কেন সে পাঠায়নি এই ফোর্সকে। কারণ সে নিজেই জড়িত ছিল এই হত্যাকাণ্ডে।’
পুলিশের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘হাসিনার দালালি করে লাভ হবে না। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে থাকুন। জনগণের সঙ্গে থাকেন। দেশের মানুষের সঙ্গে থাকেন। তবেই কাজে দেবে। দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে। আজকে সবার দায়িত্ব হয়ে গেছে দেশ বাঁচানো। আর আপনারা এখন ঘরে ঘরে ঢুকে মানুষ হত্যা করছেন। মনে করেন এগুলোর হিসাব নাই? এই মা-বোনের কান্না … বিডিআরের অফিসারদের ওয়াইফদের কান্না—এগুলো কি বৃথা যাবে? এগুলো কোনো দিন বৃথা যাবে না। আজকে যাঁরা এই জুলুম নির্যাতন করছেন, তাঁদেরকে একদিন এদের মতো চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চোখ অন্ধ হয়ে যাবে।’
একপর্যায়ে খালেদা জিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ‘ধাক্কাধাক্কি বন্ধ করেন। ধাক্কাধাক্কি করবেন না। আমরা কেউ ধাক্কাধাক্কি করতে আসিনি। আমাদের গায়ের ওপর উঠে পড়বেন না। দূরে থাকেন। আপনাদের জায়গা যেখানে, সেখানে। আপনাদের তো রাস্তায় থাকার কথা, বাড়িতে এসে গেছেন কেন? আপনাদের মেয়েরা এ রকম ঝগড়া করে কেন? এই মেয়েরা চুপ করো। কয়দিনের চাকরি হয়েছে, এত কথা বলো? কিসের জন্য এত কথা বলো। চুপ থাক। বেয়াদব কোথাকার।’
বাড়িতে ঢুকে যাওয়ার আগে বিরোধীদলীয় নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা হলেন গণতন্ত্রের রক্ষক। আর যে পুলিশ বাহিনী রয়েছে, এরা গণতন্ত্র রক্ষায়ও নেই, দেশ রক্ষায়ও নেই। দেশরক্ষা, গণতন্ত্র রক্ষার সৈনিক আপনারা। আমরা আছি আপনাদের সাথে। থাকব ইনশাআল্লাহ। তাই সাংবাদিক ভাইদের, আইনজীবী ভাইদের … জনগণ যারা রাজপথে নেমেছে, নানাভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে, তাদের প্রতি আমি জানাই সহানুভূতি। আন্তরিক ধন্যবাদ। আমাদের কর্মসূচি কালকেও চলবে।’
জনগণকে গণমাধ্যমের মাধ্যমে বলতে চাই, ‘গণতন্ত্র আজকে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন গণতন্ত্র এবং দেশ রক্ষার যে ডাক আমি দিয়েছি, সেই ডাকে যেন তাঁরা সাড়া দেন। জনগণ সাড়া দিয়েছে। আজকে সরকার ভীত হয়ে সমস্ত রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছে, যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে জনগণ আসতে না পারে। কিন্তু এই কর্মসূচি চলবে। এই সরকার অবৈধ সরকার। এই সরকার অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী সরকার। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই। এই সরকারের যদি লজ্জা থাকে তাহলে অবিলম্বে বিদায় নেবে।’
গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।এর পর থেকে বিরোধীদলীয় নেতার বাড়ির সামনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।গতকাল রাত থেকে এ নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়।বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয় আট প্লাটুন পুলিশ।তবে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার জানান, সেখানে পাঁচ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির সামনে একটি জলকামানও নেওয়া হয়।দুপুরের দিকে পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয় র্যাব।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক কিসমৎ হায়াত্সহ র্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে যান। জানতে চাওয়া হলে কিসমৎ হায়াৎ জানান, কুশলবিনিময় করতে তাঁরা সেখানে গেছেন।
এ ছাড়া বাড়ির সামনের রাস্তায় বালুভর্তি তিনটি ট্রাক ও পেছনের রাস্তায় দুটি ট্রাক আড়াআড়িভাবে রেখে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাড়ির সামনে সারা দিন সাংবাদিকদের যেতে দেওয়া হয়নি। তবে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গুলশানের একটি বাড়ির দক্ষিণ-পূর্বপাশের সীমানাপ্রাচীর বেয়ে সাংবাদিকদের একটি দল খালেদার বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের কাছে যায়। এ সময় খালেদা জিয়ার বাড়ির ভেতর থেকে তাঁদের জন্য একটি মই দেওয়া হয়। কয়েকজন সাংবাদিক সেই মই বেয়ে খালেদা জিয়ার বাড়িতে ঢোকেন। পরে তাঁরা খালেদা জিয়ার গাড়ির কাছে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন।