ভারতের সবচে’ প্রভাবশালী অনলাইন মিডিয়া ইন্ডিয়া টাইমস এর বাংলা সংস্করণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যাতে আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে শান্তি ফেরার চেয়ে অশান্তিই বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছে। যাতে বলা হয়ে হয়েছে, এভাবে নির্বাচনের রাস্তায় না গেলেও পারতেন শেখ হাসিনা।
পোর্টালটি লিখেছে, ‘নির্বাচন কি শান্তি ফেরাতে পারবে বাংলাদেশে? যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ তাঁদের বক্তব্য, এ ভাবে নির্বাচনের রাস্তায় না গেলেই পারতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ৷ এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি৷ আন্তর্জাতিক মহলও তেমন আশঙ্কা করছে৷
যে ভাবে বাংলাদেশ সরকার ৫ জানুয়ারির নির্ধারিত দিনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে শঙ্কিত এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জও৷ ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে মধ্যস্থতাকারীরা বাংলাদেশে গিয়েছিলেন৷ তাঁদের উপস্থিতিতে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে তিন দফা আলোচনা হয়৷ কিন্ত্ত কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি৷ যে যার অবস্থানে অনড় থাকায় মধ্যস্থতাকারীরা ফিরে যান৷ মহাসচিব বান-কি-মুন বলেছিলেন, ‘কোনও অবস্থাতেই সুষ্ঠু পরিবেশ ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়৷ অবিলম্বে বাংলাদেশে শান্তি ফেরাতে হবে৷’ একই আহ্বান গিয়েছিল আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ অন্যান্য দেশ থেকে৷
কাজ হয়নি কিছুতেই৷ আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধীরা অনড়৷ এই অবস্থায় নির্বাচন হওয়ার অর্থ, অন্তত ৩০০টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসকদলের জয়লাভ৷ ফলে প্রশ্ন উঠছে, কোনও গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় এমন নির্বাচন কি গ্রহণযোগ্য? মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন৷ যে কোনও মূল্যে গণতন্ত্র রক্ষা করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করে৷ ব্রিটিশ সরকারের বক্তব্য, সব দল যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, সে চেষ্টা করা উচিত৷ কারণ, একমাত্র তা হলেই জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা, ব্রিটেন ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ-ভুক্ত দেশগুলি বাংলাদেশের ভোটে পর্যবেক্ষক পাঠাবে বলে জানা গিয়েছে৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ থেকেই পরিষ্কার, বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ আদৌ নেই৷ প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ক্ষমতায় থাকার সুবিধে নিচ্ছেন হাসিনা? পাল্টা যুক্তিতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট যে পরিমাণ অশান্তি করছে, তাতে সরকারকে কঠোর হতেই হবে৷ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ ডিরেক্টর ইফতেকারউজ্জমানের বক্তব্য, ‘নির্বাচন বন্ধ করা নিয়ে খালেদা যা বলেছেন, তা হুঁশিয়ারি হলেও ঠিক ছিল৷ কিন্ত্ত নির্বাচন প্রতিহত করতে তাঁর মুখে রক্তক্ষয়ী প্রতিবাদের কথা শোনা যাবে কেন?’ তিনি অবশ্য স্বীকার করছেন, সরকার একগুঁয়ে মনোভাব ত্যাগ ছাড়লে এত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ কিন্ত্ত হাসিনা তাঁর অবস্থান থেকে সরেননি৷ ইফতেকারউজ্জমান মনে করেন, সরকার এবং বিরোধী, দু’পক্ষই এত দিন যা করেছে, তাতে নির্বাচন ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহ আর নেই৷ কারণ? ইফতেকারউজ্জমানের ব্যাখ্যা, ‘ভোটের নামে এমন অশান্তি কে চান? সাধারণ মানুষ শান্তি চান৷ আগে প্রাণ, তার পর সব কিছু৷’