কথায় আছে, অর্থই নাকি সকল অনর্থের মূল। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এ কথার অর্থ যেন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বস্তাভর্তি হয়ে জমছে টাকার গুদামে।
কোনো এক সময় পণ্যদ্রব্য বিনিময়ের মাধ্যমেই জীবন-জীবিকা চালানো সম্ভব হলেও এখন কুলোটা দিয়ে মুলোটা নেওয়ার দিন শেষ। অবাস্তব হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো টাকা নিয়ে বসে আছে কিন্তু নেওয়ার লোক নেই। এমন দাবি খোদ ব্যাংকারদেরই।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়ায় ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় জমছে। দিন দিন ব্যাংকবিমুখ হচ্ছেন নতুন-পুরোনো উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। মাত্র এক বছর আগেও ব্যাংকঋণ পাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ছুটতেন। এমনকি ঋণের জন্য যথারীতি লবিংও করতেন। আর এখন ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের পেছনে ঘুরছে ব্যাংকগুলো।
টানা রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, আস্থাহীনতা ও উচ্চ সুদের কারণে কেউ ঋণ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকিং খাতে অলস টাকা ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৫৮ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরের পর থেকে প্রতি মাসে ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পরিমাণ বাড়ছেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, চলমান ও আগামী নির্বাচনের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। বারবার সমাধানের তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়ায় সামনে ব্যবসায়িক অচলাবস্থার আশঙ্কা করছেন তারা। ফলে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব কারণ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে একাধিক কেলেঙ্কারির কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকবিমুখ হচ্ছেন। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণের অতিরিক্ত সুদের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। তাই তারা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। নগদ টাকা যাদের আছে, তারা তা ব্যাংকে রেখে দিয়েছেন। তাই ব্যাংকগুলোয় তারল্য বাড়ছে, যা এখন অলস টাকা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের ব্যাংক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় স্থবির সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের বড় জায়গা পোশাকশিল্প খাত। আর এ খাতেও একের পর এক দুর্ঘটনায় আমরা হতাশ। ফলে লাভজনক খাতে বিনিয়োগের সুযোগ নেই। ব্যাংকে বাড়ছে অলস টাকার পাহাড়।’
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ব্যাংক নির্বাহীদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিনের সঙ্গে। তারল্যের সংকট নেই দাবি করে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা শঙ্কিত। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বড় ধরনের বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ অবস্থায় আগামী দিনে ব্যবসায়িক মন্দার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’