ফেঁসেই যাচ্ছে ইসি:কারাদণ্ড হতে পারে ইসি কমিশনারদের

0
180
Print Friendly, PDF & Email

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত হলফনামা খুঁজে না পাওয়ার ঘটনায় অবশেষে ফেঁসেই যাচ্ছে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনীহা দেখানো ও নির্দেশনা মান্য না করার অভিযোগে আগামীকাল রোববারই আবারো বিষয়টি আদালতের নজরে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। তারা জানিয়েছেন, এটি প্রমাণ হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) কমিশনের অপর চার কমিশনারের প্রত্যেকের ৬ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। 

গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎ করেই প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত হলফনামা ইসির ওয়েবসাইটে শতচেষ্টা করেও বের করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ইসিতে দেয়া হলফনামার সূত্র ধরে প্রার্থীদের অর্জিত সম্পদ নিয়ে গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। গত রোববার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে ওয়েবসাইট থেকে হলফনামা সরিয়ে ফেলার অনুরোধের প্রেক্ষিতেই ইসি এমনটি করেছে। তবে কমিশন থেকে দাবি করা হয়েছে, যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে এমনটি হতে পারে।

২০০৫ সালে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয়ের উৎস ও ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাসহ আট ধরনের তথ্য জানানোর নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী, কেএম জাবির ও জহুরুল ইসলাম জনস্বার্থে একটি রিট মামলা করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি রুল জারি করেন। একই বছরের ২৪ মে হাইকোর্ট প্রার্থীদের আট ধরনের তথ্য ভোটারদের কাছে মিডিয়ার মাধ্যমে সরবরাহের নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। রায়ে এসব তথ্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে প্রচারের জন্য ইসিকে নির্দেশ দেন। এ উদ্দেশ্য সাধনে লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে সরকারকেও নির্দেশ দেন আদালত।

রায়ের পরই চট্টগ্রামের আবু সাফা নামে জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি জয়নুল আবেদীন রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। এরপর ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। ২০ নভেম্বর আদালত আবু সাফাকে হাজির করতে নির্দেশ দিলেও তিনি হাজির হননি। ১১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করে দেন। ফলে হাইকোর্টের দেয়া রায়ই বহাল থাকে।

আদালতের রায়ে উল্লেখ করা আট ধরনের তথ্য হচ্ছে, ১. প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ২. বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন কি না ৩. প্রার্থী সম্পর্কে পূর্বে কোনো ফৌজদারি মামলা ছিল কি না এবং যদি থাকে তার ফলাফল ৪. পেশা/জীবিকা ৫. আয়ের উৎসসমূহ ৬. পূর্বে সংসদ সদস্য ছিলেন কি না, হয়ে থাকলে ওই সময়ে জনগণকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অর্জনে ব্যক্তিগত বা সমষ্ঠিগতভাবে কি ভূমিকা পালন করেছেন ৭. প্রার্থী ও প্রার্থীর পোষ্যদের সম্পদ এবং দায়-দেনার বিবরণ ৮. প্রার্থী নিজে ব্যক্তিগত বা যৌথভাবে পোষ্যদের নামে ব্যাংক কিংবা অর্থ লগ্নিকারী কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো প্রকার ঋণ গ্রহণ করেছেন কি না, করে থাকলে ঋণের পরিমাণ ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য।

এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়ালেও হলফনামা ও ব্যক্তিগত তথ্যাদির প্রচারের বিষয়ে বলা আছে। ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২ (৩বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামার মাধ্যমে আটটি তথ্য এবং কোনো কোনো তথ্যের স্বপক্ষে কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাবলি ভোটারদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। হলফনামা প্রচারের সুবিধার্থে প্রার্থীদের কাছ থেকে হলফনামার মূল কপি ছাড়াও আরো দুটি ফটোকপি নিতে হবে।’

এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক বলেন, প্রার্থীদের এসব তথ্য প্রচারে আদালতের নির্দেশ রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের পরে নির্বাচন কমিশন আরো একটি বিষয় এখানে যোগ করেছে। সেটি হলো- ‘পরবর্তীতে যদি জানা যায় কেউ তথ্য গোপন করেছেন তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।’ এসব পর্যালোচনা করে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, প্রার্থীদের হলফনামা প্রচারের ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন, কারো কথায় ইসি এটি গোপন করতে পারে না। এ বিষয়টি আবারো আদালতে আসছে। যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রমাণিত হলে কমিশনারদের আদালতের নির্দেশ অমান্য করার দায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, হঠাৎ করেই হলফনামা উধাও হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর গত সোমবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসে কমিশন। হলফনামা প্রকাশের আইন কানুন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন কমিশনাররা। হলফনামার তথ্য প্রকাশ করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুনর্বিবেচনার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।

শেয়ার করুন