ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, “এখনকার বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বললেন-জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। তিনি কোথায় পেয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণ চায় না।”
শুক্রবার রাতে জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত টক শো ‘তৃতীয় মাত্রা’ অনুষ্ঠানে মাহফুজ আনাম এসব কথা বলেন।
মাহফুজ আনাম বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যতগুলো জরিপ হয়েছে প্রত্যেকটিতে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পক্ষে। এখন আওয়ামী লীগ মনে করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এজন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করে তাদের সুবিধা যেটি হবে সেটিই গণতন্ত্রের চর্চা।”
বর্তমান বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র চলছে এটি কীভাবে সংজ্ঞা দেবেন-উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের এমন কথার প্রসঙ্গে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, “গণতন্ত্র সংজ্ঞাটি ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এখন যে গণতন্ত্র এটি নগ্ন ক্ষমতার লড়াই। এটি মূলহীন, আদর্শহীন ও দেশপ্রেমহীন ক্ষমতার লড়াই। রাজনীতিতে এসেই অর্থবানানোর চিন্তাভাবনা করে।”
তিনি বলেন, “একটা জিনিস আওয়ামী লীগ বুঝতে পারছে না, পাঁচ কোটি মানুষকে যে ভোটাধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে এর পরিণতি ভালো হবে না। শেখ হাসিনার বোঝা উচিত, ব্যক্তিগত জেদে ইউনূসের বিরোধিতা করা যায়, জনগণের সঙ্গে খেলা যায় না।”
তিনি আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনো দুর্নীতিকে বড় ধরনের ইস্যু হিসেবে দেখেননি। তিনি মুখে বলেছেন- দুর্নীতিকে দমন করতে হবে। কিন্তু তিনি বাস্তবে দুর্নীতিকে দমন করেননি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই কিছু কিছু মন্ত্রী সম্পর্কে দুর্নীতির কথা জানেন। এরপরেও তিনি সেই মন্ত্রীদের সুনাম গাইছেন। সেই মন্ত্রী আরো দুর্নীতি করার সুযোগ পায়।”
আওয়ামী লীগ যা করছে তাতে দলটির গৌরবময় ঐতিহ্য ধ্বংস হবে বলেও মনে করেন তিনি।
মাহফুজ আনাম কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের ভূমিকার সমালোচনা করেন। এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার ভূমিকারও সমালোচনা করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক।
বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করার কোনো আন্তরিকতা আওয়ামী লীগের ছিল না বলেও মন্তব্য করেন মাহফুজ আনাম। ‘যাকে দিয়েই ফোন করান কাজ হবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেন সুশীল সমাজের এই সদস্য।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মাহফুজ আনাম ভোটারবিহীন নির্বাচন থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানান। বিরোধী দলকে হত্যা ও সহিংস কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। আর জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।