রোববারের ঢাকা অভিমুখে ‘গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা’ সফল করতে বিএনপি দু’ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের একটি অংশ ঢাকায় কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। অন্য একটি অংশ এলাকায় থেকে স্থানীয় ‘মাঠ’ দখলে রাখবে।
রোববারের ঢাকা অভিমুখে ‘গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা’ সফল করতে বিএনপি দু’ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের একটি অংশ ঢাকায় কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। অন্য একটি অংশ এলাকায় থেকে স্থানীয় ‘মাঠ’ দখলে রাখবে। ঢাকায় কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিলে সারাদেশে একই সঙ্গে ‘তীব্র’ প্রতিক্রিয়া দেখানোর লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে এ কৌশল। আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা ওই কর্মসূচি প্রতিহত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট উদ্বেগ থেকেই এ পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। রাজধানীর নেতাকর্মীদের নয়াপল্টনের ওই কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যায় শামিল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, এর অঙ্গ সংগঠনগুলো ও জোটের শরিকরা। এদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে ইতিমধ্যেই ঢাকায় ১৮ দলের নেতাকর্মীরা সমবেত হওয়া শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। ঢাকায় আসতে যেখানে বাধা দেওয়া হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জোটের নেতাকর্মীদের।বিএনপির দুই ধরনের প্রস্তুতি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান গতকাল সমকালকে বলেন, সারাদেশেঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দেশের মানুষ এ কর্মসূচিতে শামিল হতে উন্মুখ হয়ে আছে। ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ জনতার ‘বিপুল’ উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ওই কর্মসূচি সফল হবে বলে আশা করেন তিনি।মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি আশা করি, খালেদা জিয়া ঘোষিত ওই গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না। বাধা দিলেও কর্মসূচি সফল হবে বলেই আশা তার। ‘জনসমুদ্রের’ কাছে সব বাধাই তুচ্ছ হয়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
ঢাকায় দফায় দফায় বৈঠক :ঘোষিত কর্মসূচিতে রাজধানীর নেতাকর্মীদের ব্যাপক হারে সমাগম ঘটাতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপি, অঙ্গ সংগঠন ও জোটের শরিক দলের নেতারা সমান ব্যস্ত রয়েছেন ‘গোপনীয়’ এসব ঘরোয়া প্রস্তুতি সভা নিয়ে।
বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সমকালকে বলেন, রোববারের কর্মসূচি সফল করতে যুবদল রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি জানান, ঢাকায় বিএনপি, যুবদল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের প্রতিদিনই একাধিক প্রস্তুতি সভা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
জানা গেছে, ঢাকায় বিএনপির আন্দোলন জোরদার করতে ৮ জন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তাদের মধ্যে দু’জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারারুদ্ধ। অন্য নেতারা গাড়ি পোড়ানোর মামলায় আত্মগোপনে। এ অবস্থায় রোববারের কর্মসূচি সফল করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব :রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এ কর্মসূচি ঘিরে। সে অনুসারে এসব জেলায় চলছে ‘সর্বাত্মক’ প্রস্তুতি গ্রহণের পালা। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার সমকালকে বলেন, জেলার প্রতিটি থানায় নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে ঘরোয়া প্রস্তুতি সভায় পুলিশ হামলা চালিয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও ফরিদপুর জেলা সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া সমকালকে বলেন, সব বাধা মোকাবেলা করে ঢাকায় যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলার নেতাকর্মীরা।ঢাকায় আসা শুরু নেতাকর্মীদের :কর্মসূচি ঘোষণার পর দিন বুধবার থেকেই রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধাপে ধাপে এ আগমন অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে। ঢাকায় ইতিমধ্যে যেসব নেতাকর্মী এসেছেন তাদের বেশির ভাগই আত্মীয়-স্বজনের বাসা ও মসজিদ-মাদ্রাসায় অবস্থান করছেন। গ্রেফতার এড়াতে তারা হোটেলে অবস্থান নিচ্ছেন না। আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকার কর্মসূচিতে যেতে শুরু করেছেন। ঢাকা অভিযাত্রা সফল করতে চট্টগ্রাম মহানগরীর নেতারা গতকাল বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেছেন। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন এতে নেতৃত্ব দেন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, ওই এলাকার প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় আসা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খুলনার ৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলেও জানান মহানগরী বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলা নেতারা জানিয়েছেন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় যেতে শুরু করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে জেলা নেতারা অভিযোগ করেন, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে ঢাকায় যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর অফিস জানায়, জেলার ১৮ দলের ৪ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় আসা শুরু করেছেন। নেতাকর্মীরা বাস ও ট্রেনে করে যার যার মতা ঢাকায় আসবে বলে জানান নেতারা।কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, জেলা থেকে বিভিন্নভাবে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেছেন। এখান থেকে পাঁচ-সাত হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।