রাজশাহী নগরীতে ককটেলে গুরুতর আহত পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকারকে ঢাকায় পাঠানো নিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ কনস্টেবলদের অভিযোগ, শুধুমাত্র কনস্টেবল হওয়ায় কর্মকর্তারা চিকিৎসকের পরামর্শ সত্ত্বেও গুরুত্ব না দেওয়ায় উন্নত চিকিৎসার আগেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেলেন সিদ্ধার্থ। সহকর্মীরা রাতে সিদ্ধার্থ সরকারের মৃত্যুর খবরে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তারা বলেন, ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে। সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর অপারেশন শেষে স্থানীয় চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ঘটনার ৭ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। রাত ৮টা ২০ মিনিটে তাকে ঢাকা সিএমএইচ-এ নেওয়া হয়। সেখানকার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় মারা যান সীদ্ধার্থ। তার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবলরা অভিযোগ করেন, শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের গড়িমসির কারণে উন্নত চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে তার। তাদের বিশ্বাস সময়মতো উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো বাঁচানো যেত তাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরএমপির এক কনস্টেবল সরাসরি এ মৃত্যুর জন্য কমিশনারকে দায়ী করে বলেন, স্যার যদি সময়মতো সিদ্ধার্থকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সিএমএইচ-এ পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন তাহলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত। তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না আরএমপির কনস্টেবলরা। কনস্টেবলরা আরো অভিযোগ করেন, এমন পরিণতি যদি কনস্টেবল না হয়ে কোনো কর্মকর্তার হতো তাহলে আধাঘণ্টার মধ্যে তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতো। এর আগেও তাই করা হয়েছে। শুধু কনস্টেবল হওয়ায় সিদ্ধার্থর চিকিৎসায় অনীহা দেখিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে এসব বিষয়ে রাতে আরএমপি কমিশনার ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান ও উপ-কমিশনার (সদর) আবু সালেহ শাহ মো. গোলাম মাহমুদের সঙ্গে মোবাইলে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার তমিজউদ্দিন ফোন ধরলেও তিনি জানান, ছুটিতে ঢাকায় রয়েছি। এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই আমার। তবে কাল দু’এক দিনের মধ্যে তিনি রাজশাহীতে ফিরবেন বলে জানান। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ফেরার পথে নগরীর লোকনাথ স্কুল মার্কেটের সামনের সড়কে পুলিশ ১৮ দলীয় নেতাকর্মীদের আটকের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশের চলন্ত ভ্যান লক্ষ্য করে ককটেল হামলায় চালানো হয়। এতে ওই গাড়িতে থাকা পুলিশের ৯ সদস্য আহত হন। ককটেলে ক্ষত-বিক্ষত হন পুলিশের তিন সদস্য। এদের মধ্যে সিদ্ধার্থ সরকারকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে রাত ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকায় নেওয়া হলে সিএমএইচ-এ তার মৃত্যু হয়। নিহত ওই পুলিশ সদস্যের বাড়ি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় বলে জানা গেছে। তার স্ত্রী দিপ্তীও রাজশাহী মহানগর পুলিশের কনস্টবল হিসেবে কর্মরত।