‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ সফল করতে কৌশলী বিএনপি

0
116
Print Friendly, PDF & Email

‘প্রতিকূল পরিস্থিতির’ মধ্যেও আগামী রোববার ঢাকায় বড় ধরনের জমায়েত করতে চায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। সরকার ঢাকায় আসতে বাধা দেবে—এমনটি ধরে নিয়ে আগেভাগে নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে ঢাকায় আনার কৌশল নিয়েছে জোট।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, সরকারের কঠোর অবস্থানেও ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত ঘটানোর বিষয়ে জোট এখনো অনড়। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও তাতে যোগ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ভাবছেন না। এ জমায়েতের মাধ্যমে তাঁরা সরকারের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে চান। তাঁরা আশা করছেন, বাধাবিপত্তির মধ্যেও বড় ধরনের জমায়েত হবে।

দলীয় সূত্র বলছে, ঢাকায় আসার পথে যেখানে বাধা দেওয়া হবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বা অবস্থান নেওয়া হবে। যাঁরা আগেই ঢাকায় পৌঁছাবেন, তাঁদের হোটেলে না থেকে আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতদের বাসায় ওঠার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও অভিযাত্রার প্রস্তুতি যথেষ্ট নাজুক। যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে, সেভাবে জমায়েত করা যাবে কি না, তা নিয়ে দলের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, সরকার ঢাকায় আসতে বাধা দেবে—এমনটি ধরে নিয়েই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ভাগ করে একটি অংশকে শনিবারের আগেই ঢাকায় চলে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুসারে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন।

বিএনপি মনে করে, শনি-রোববারে তাঁদের কর্মীদের কোনভাবেই ঢাকায় আসতে দেবে না সরকার। তার পরও তাঁদের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ সারা দেশ থেকে রোববার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। তাঁদের যেখানেই বাধা দেওয়া হবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে বাধা দিলে তা হবে সরকারের জন্য ‘আত্মঘাতী’।

প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ১৮-দলীয় জোট আন্দোলনের মধ্যেই আছে। সুতরাং সারা দেশে নেতা-কর্মীরা সব সময়ই যেকোনো ধরনের কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত। সরকার শেষ পর্যন্ত কর্মসূচিতে বাধা দেবে না, এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জোটের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সরকার কোনো অগণতান্ত্রিক আচরণ করুক, তা তাঁরা চান না। বাধা দিলে পরবর্তী যে কঠোর কর্মসূচি আসবে, তাতে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।

আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি জানান, ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বগুড়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। গণতন্ত্রের অভিযাত্রার এই কর্মসূচিতে যোগদানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সরকার নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারেন, এমন আশঙ্কায় বগুড়া থেকে ‘আগাম ঢাকা চলো’ কৌশল নিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এ কর্মসূচিতে বগুড়া থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী যোগদানের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন। অবশিষ্ট নেতা-কর্মীরা শুক্রবারের মধ্যে নিশ্চিত ঢাকায় পৌঁছে যাবেন। বগুড়া থেকে ৫০ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় যাবেন। তিনি জানান, ঢাকায় যাওয়ার পথে যেখানেই বাধা আসবে, সেখানে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে।

বগুড়া জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাহফুজুর রহমান জানান, বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যেই ৫০ হাজার নেতা-কর্মীর বগুড়া থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। হোটেলে না উঠে আত্মীয়স্বজন কিংবা অন্য কোথাও থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম থেকে হাজার পাঁচেক নেতা-কর্মী অংশ নিতে পারেন। সেই রকম প্রস্তুতি নিয়ে গত বুধবার রাত থেকে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ঢাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়ানোর জন্য নেতা-কর্মীদের দলবদ্ধভাবে ঢাকায় যেতেও নিরুত্সাহিত করা হয়েছে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ২০ হাজার লোকের জমায়েত করবেন বলে প্রচার করছেন। অগ্রবর্তী দলের সদস্যরা বুধবার রাতে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেছেন বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা বুধবার চট্টগ্রাম ছাড়েন তাঁদের সংখ্যা বেশি নয় বলে জানা গেছে।

নগর বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ঢাকা অভিমুখে ২০ থেকে ৪০ হাজার নেতা-কর্মী যাচ্ছেন বলে আমরা প্রচার করছি। আসলে পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে নেই। তাই প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে সর্বনিম্ন ১২০ জন করে ঢাকায় যাওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নিজ উদ্যোগে তাঁদের ঢাকায় অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

আমাদের কুষ্টিয়া অফিস জানায়, কর্মসূচিতে যোগ দিতে কুষ্টিয়া থেকে জেলা বিএনপি ও হেফাজতের নেতা-কর্মীরা আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা যাওয়া শুরু করেছে। জেলার প্রত্যেক উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের জরুরি বৈঠক করেছেন।

জানতে চাইলে জেলা হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল বলেন, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে নেতা-কর্মীরা বাস-ট্রেন যোগে ঢাকা যাওয়া শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে কুষ্টিয়া থেকে প্রায় তিন হাজার নেতা-কর্মী কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। দলীয় কর্মসূচিতে আপনারা কেন যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নে হেফাজতের ওই নেতা বলেন, ‘জালেম সরকারের বিরুদ্ধে আলেমরা অভিযাত্রায় যাচ্ছেন।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দীন বলেন, উপজেলা পর্যায়ের সভা শেষ হয়েছে। সন্ধ্যায় জেলা কমিটির সভা আছে। যাদের ঢাকায় থাকার জায়গা আছে, তারা ইতিমধ্যে চলে গেছে। বাকিরা পর্যায়ক্রমে যাচ্ছে। কুষ্টিয়া থেকে প্রায় ১৫ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকার কর্মসূচিতে যোগ দেবে।

গত মঙ্গলবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। ওই দিন সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণকে পতাকা হাতে ঢাকায় এসে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সমমনা দলগুলোর প্রস্তুতি: এ কর্মসূচির প্রতি ইতিমধ্যে সংহতি জানিয়েছে ১৮-দলীয় জোটের বাইরে থাকা জাতীয় পার্টি (জাফর) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ। কাজী জাফর কর্মসূচি সফল করতে আগামীকাল বিকেলে কর্মিসভার ডাক দিয়েছেন।

শেয়ার করুন