আগামী ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর এই নির্বাচনকে প্রতিহত করতে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর লাল সবুজের পতাকার সঙ্গে লাঠি নিয়ে ঢাকা অভিমুখে গণতন্ত্র অভিযাত্রার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে খালেদা জিয়ার এই ঘোষণা ও কর্মসূচিকে পাত্তা দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে এই কর্মসূচি প্রতিহত করতে ওইদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ২৯ ডিসেম্বর ঢাকামুখী গণতন্ত্র অভিযাত্রা। এই অভিযাত্রার নাম দেয়া হয়েছে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা’। রাজধানীমুখী এ অভিযাত্রার স্লোগান হবে ‘নির্বাচনকে না, আর গণতন্ত্রকে হ্যাঁ’।
তিনি জানান, এই অভিযাত্রা হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অর্থবহ নির্বাচনের দাবিতে। এই অভিযাত্রা হবে শান্তি, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের পক্ষে। আমরা এই অভিযাত্রার নাম দিয়েছি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ গণতন্ত্রের অভিযাত্রা। তাই এই আন্দোলনকে আরো বিস্তৃত করতে ওইদিন সারাদেশ থেকে দলমত, শ্রেণী-পেশা, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সক্ষম নাগরিকদেরকে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও তিনি ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও শহরে সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
বেগম জিয়ার এই ঘোষণার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ আন্দোলন কোনো গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক পথ নয়। এটি একটি সহিংস পথ।
তারা বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে সমাবেশ করার অধিকার যে কোনো রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী পতাকার সঙ্গে লাঠি নিয়ে মিছিল করে গণতন্ত্রের অভিযাত্রার ডাক দিয়েছেন। পতাকা বুকে ধারণ করে মিছিল করা যায়। কিন্তু পতাকার সঙ্গে লাঠি নিয়ে মিছিল করা যায় না। তাই এর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী ওইদিন মাঠে থাকবে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে কোনো মূল্যে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি” গণতন্ত্রের অভিযাত্রা আন্দোলন প্রতিহত করা হবে। আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। যথাসময়েই হবে। কারো সাধ্য নেই এই নির্বাচন প্রতিহত করার।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, খালেদা জিয়ার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ অবৈধ ও অসাংবিধানিক। খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের অভিযাত্রার ডাক দিয়ে লাঠিহাতে পতাকা নিয়ে আসতেও বলেছেন। পতাকা বুকে ধারণ করতে পারে। কিন্তু লাঠির সঙ্গে পতাকা নিয়ে আসতে পারে না। খালেদা যা বলেছেন তা অগণান্ত্রিক ও বেআইনি মার্চের কথা। এটি মার্চ ফর ডেমোক্রেসি নয়, মার্চ ফর অটোক্রেসি (স্বৈরতান্ত্রিক), হিপোক্রেসি (ভণ্ডামী)। তার এই বক্তব্য পরিশীলিত করতে হবে। মূলত মার্চ ফর ডেমোক্রেসি অজ্ঞতাপ্রসূত, এটা ডেমোক্রেসি নয়।’
তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই আন্দোলন মোকাবেলা ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ওইদিন আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে থাকবে।’
সুরঞ্জিত আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া সংবিধান অনুযায়ী সমাবেশ করতে পারেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার অধিকার তাকে কেউ দেয়নি। তাকে গণতান্ত্রিক আচরণের মধ্যে আসতে হবে। না হলে তার দায়দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।’