মার্চ ফর ডেমোক্রেসি দুই টার্গেট

0
126
Print Friendly, PDF & Email

রাজধানীমুখী জাতীয় পতাকা হাতে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ অভিযাত্রা সফল করতে নানামুখী প্রস্তুতি চলছে ১৮ দলের। একদিকে সারা দেশে তৃণমূলে শক্ত অবস্থান ধরে রাখা, অন্যদিকে অভিযাত্রায় দলমত নির্বিশেষে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এ দুই চ্যালেঞ্জকে জয় করে ২৯শে ডিসেম্বরের অভিযাত্রায় অন্তত ২০ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে

চায় বিরোধী জোট। রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকের চেয়ে নানা শ্রেণী-পেশার সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিরোধী নেতারা। তবে ধারাবাহিক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে বিভাগীয় ও জেলা নেতারা। ১৮ দলের নেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানান, রাজধানীতে দীর্ঘ সময় অবস্থান নয়, সরকারের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিয়ে চাপ সৃষ্টি ও চূড়ান্ত আন্দোলনে বিরোধী নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার দুই লক্ষ্যেই এসেছে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ অভিযাত্রার ঘোষণা। বিএনপি সূত্র জানায়, বিগত তিন সপ্তাহ ধরে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি অবরোধের পাশাপাশি রাজধানী অভিমুখী কর্মসূচি সফল করার জন্য প্রস্তুতির নির্দেশনা দেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশনা পাওয়ার পর অনানুষ্ঠানিকভাবেই জোরালো প্রস্তুতি শুরু করেছেন তৃণমূল নেতারা। সূত্র জানায়, কৌশলগত কারণে ২৯শে ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে অংশ নেবেন প্রতিটি জেলা থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশ। যারা ঢাকা অভিমুখী মার্চে অংশ নেবেন তারা আসবেন গ্রেপ্তার, দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থানের মানসিক ও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করবেন নিজ নিজ এলাকায়। বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বর্তমানে ঢাকা ছাড়া প্রায় প্রতিটি জেলায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা রাজনীতির মাঠছাড়া। জনবিক্ষোভের মুখে প্রহসনের নির্বাচনের প্রস্তুতি দূরে থাক এলাকায় তারা স্বচ্ছন্দে চলাফেরাও করতে পারছেন না। এ অবস্থায় প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে শক্ত এ অবস্থান ধরে রাখার বিকল্প নেই। ফলে গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রায় সর্বশক্তিতে অংশ নিতে গিয়ে মাঠ হাতছাড়া না করতেই এ কৌশল নিয়েছে বিরোধী জোট। এছাড়া অভিযাত্রা থেকে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার তাৎক্ষণিক নতুন কর্মসূচি সফল করাও জরুরি। বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম সূত্রে জানা গেছে, বিজয়ের মাসে কোন হঠকারী পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায় না বিরোধী দল। দু’টি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আগামী ২৯শে ডিসেম্বর ঢাকা অভিমুখী গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা কর্মসূচি ঠিক করেছেন খালেদা জিয়া। প্রথমত, রাজধানীতে বিপুল মানুষের শোডাউনের মাধ্যমে সরকারকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের শেষ সুযোগ দিতে চান তিনি। চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ভেঙে দিতে চায় সরকারের আত্মবিশ্বাস। দ্বিতীয়ত, সরকারের দমন-পীড়নে হতোদ্যম বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চান। সূত্র জানায়, রাজধানীতে দীর্ঘসময়ের জন্য অবস্থান নেয়ার পক্ষে নন বিরোধী নেতা। ভিন্ন কোন শক্তির আগমনের পথ তৈরি করতে চান না তিনি। এমন মনোভাব থেকেই আহ্বানে খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে পরিষ্কার বলেছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা এলে জনগণ তা মোকাবিলা করবে। পরে কঠোর কর্মসূচি দেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না। নেতারা বলেন, গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রায় বিপুল সংখ্যক জনতার সমাগম হলে সরকারের প্রতি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে আলোচনার জন্য স্বল্প সময়ের একটি আলটিমেটাম দিতে পারেন খালেদা জিয়া। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কঠিন কর্মসূচির সিদ্ধান্তও আসতে পারে তাৎক্ষণিক। সূত্র জানায়, ১৮ দলের কর্মী-সমর্থকদের বাইরে অন্তত ৫-৬ লাখ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ড্যাব, এ্যাব, সাংবাদিক সংগঠনসহ নানা পেশাজীবী সংগঠনকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। নেতারা জানান, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ছাড়াও মহাজোটের বাইরে থাকা একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক সমর্থন পেয়েই গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন খালেদা জিয়া। মার্চ ফর ডেমোক্রেসিকে সফল করতে সারা দেশ থেকে দলমত, শ্রেণী-পেশা, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সক্ষম নাগরিকদেরকে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা করার আহ্বান জানান। সব ধরনের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মঙ্গলবারের বক্তব্যে খালেদা জিয়া অভিযাত্রায় ব্যবসায়ী, সিভিল সমাজ, ছাত্র-যুবক, মা-বোন, কৃষক-শ্রমিক, কর্মজীবী-পেশাজীবী, আলেম, শেয়ার বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত, বর্তমান সরকারের আমলে নির্যাতিত, পাহাড়ের মানুষসহ সব ধর্মের নাগরিকদের আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া চারটি নীতি-কৌশলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি, জাতীয় ক্ষেত্রে বিতর্কিত বিষয়গুলো শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক পন্থায় মীমাংসার রাজনৈতিক সংকল্পকে জোরদার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা জোরদার এবং সর্বোপরি ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক সংগ্রাম কমিটিগুলোর পাশাপাশি দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনরত সকল পক্ষকে নিয়ে অবিলম্বে জেলা, উপজেলা ও শহরে ‘সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনী তামাশা প্রতিহতের নির্দেশনা দেন। নেতারা জানান, সরকারের কঠোর অবস্থানের বিপরীতে বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা রাখতেই লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে সকলেই ঢাকা আসার আহ্বান জানান। নেতারা বলেন, জাতীয় পতাকা হাতে থাকলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা কাজ করে, সাহসের জন্ম হয়। ফলে দুই জোটের বাইরে থাকা একাধিক রাজনৈতিক দল এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারে। ইতিমধ্যে বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা ও কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি অভিযাত্রায় অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হেফাজত ইসলাম-ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় অংশ নিতে পারেন। বিরোধী নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের সমর্থন আদায় করতে চান বিরোধী নেতা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা চাকরির ভয় ও হয়রানির কারণে মুখ বুজে সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন তাদের সাহস দিতে চান। বিএনপি নেতারা জানান, বিরোধী নেতা পতন বা পদত্যাগের চেয়ে এজেন্ডানির্ভর অর্থবহ আলোচনায় সরকারকে বাধ্য করতে জোর দেবেন। তিনি চান সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার ক্ষমতায় থাকুক। তবে ৫ই জানুয়ারির ঘোষিত প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের বিধান সংযোজন করুক। তিনি এমন কিছু করতে চান না যাতে চলমান আন্দোলনের ওপর আন্তর্জাতিক সমর্থন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্ষতি না হয়। সমঝোতার মনোভাব প্রকাশ করেই ২৪শে ডিসেম্বরের বক্তব্যে তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতি হচ্ছে আর্ট অব কমপ্রোমাইজ। সমঝোতা স্থাপন করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। সরকারের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া পরিষ্কার বলেছেন, ১৯৯৬ সালে আমরা আপনাদের দাবি মেনে নিয়ে সমঝোতা স্থাপন করেছিলাম। এখন আপনারা ক্ষমতায় আছেন। জনগণের দাবি মেনে নিয়ে সমঝোতায় আসুন। এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি। প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল ও আলোচনা শুরু করুন। আমরাও আলোচনায় বসতে রাজি আছি। নেতারা জানান, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হলে রাজনীতির নতুন এক মেরুকরণে শুরু হবে ২০১৪ সাল। উল্লেখ্য, আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দু’টি চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

শেয়ার করুন