বিএনপির ডাকা রবিবারে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি নিয়েই সরকার ও বিরোধীপক্ষ এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থামিয়ে দিতে ঢাকামুখী অভিযা্ত্রা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে। সরকার চেষ্টা করছে ১৮ দলের সমন্বিত প্রচেষ্টা বানচাল করার। ২৮ ডিসেম্বরের কর্মসূচি যাতে সফল হতে না পারে সে জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগ এখন থেকেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছ।
ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেই দিয়েছেন, ‘মার্চ ফর ডেমো্ক্রেসিতে’ বাধা দিলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনের কেক কাটার অনুষ্ঠানে তিনি এ হুমকি দেন।এদিনই বিএনপির প্রতিনিধি দল কর্মসূচির অনুমতি দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।
বিএনপির সহকারী অফিস সম্পাদক শামিমুর রহমান শামিম জানান, আবেদনপত্রে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি সমাবেশে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। সেখানে বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সরকার বলছে, রবিবারের কর্মসূচি জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ৬ দিন আগে ডেকেছেন খালেদা জিয়া।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, বিএনপির এই কর্মসূচি মূলত নির্বাচনকে বানচাল করার কর্মসূচি। যদি বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা প্রতিহত করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইতোমধ্যে সরকার বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করেছে। আজ থেকেই সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছ । চারদিকে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে যে, প্রয়োজনে সরকার ১৮ দলের ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচি ঠেকাতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে। গতবছর ১২ মার্চ বিএনপি যখন অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল তখনও সরকার একই কাজ করেছিল।
আওয়ামী লীগ সুত্র জানিয়েছে, শনিবার থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগ কর্মীরা অবস্থান নেবে।
বুধবার রাতে ১৪ দলের নেতারা এক বৈঠকে অভিযোগ করেছেন, বহু জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারী রাজধানীতে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে।এজন্য তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আজ বৃহস্পতিবার এক বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে বিরোধীজোটের কর্মসূচি কিভাবে প্রতিহত করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। বিরোধীরা যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না ঘটাতে পারে।
এদিকে, বিএনপি তৃণমূলের নেতাকর্মীরদের রবিবারের ঢাকা অভিযাত্রায় অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ দিচ্ছে। যেকোনোভাবে তারা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তা সফল করার ব্যাপারে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপি নেতারা তাদের কর্মীদের আগেভাগেই ঢাকা আসতে বলে দিয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা সাংবাদিকদের বলেছেন, ইতোমধ্যেই ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত হয়ে ঢাকামুখী হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের বলে দেয়া হয়েছে। যাতে দুই দিন আগে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে সরকার গাড়ি চলাচল বন্ধ করলেও কর্মসূচিতে অংশ নিতে কোনো অসুবিধা না হয়।
রাজধানীর মধ্যে যেখানেই সরকারি বাধার শিকার হবে নেতাকর্মীরা সেখানেই অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ১৮ দলের নেতাকর্মীরদের।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার যদি কর্মসূচি বানচাল করে দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে। সেখান থেকে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী ১৮ দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ ডাকা হয়েছে।
বিক্ষোভের অংশ হিসেবে দেশের সব জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে ১৮ দল। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।