আমি মাত্র বাসে উইঠা দরজার পাশের সিটে বসছি। আমার কয়েক সিট পরে বসল ফেরদৌস। এর মধ্যে হঠাত্ মাঝখানে দুইটা বোমা পইড়া চারদিকে আগুন ধইরা যায়। আমি আর ফেরদৌস ভয়ে দৌড় দেই। ফেরদৌস একটা সিটের সঙ্গে ধাক্কা খাইয়া পইরা যায়। পরে আবার উইঠা দাঁড়ায়। আমি আল্লাহ বইলা মুখ চাপা দিয়া বাইর হইয়া আসি। চোখ মেইলা দেখি, পুইড়া বাসের জানালায় আটকে আছে ফেরদৌস।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতর ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মো. সাইদুর আজ বুধবার প্রথম আলো ডটকমকে এসব কথা বলেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ে পুলিশের রিকুইজিশন করা বাসে পেট্রলবোমা হামলায় নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল ফেরদৌস খলিল। আহত হন কনস্টেবল মো. সাইদুর ও বাসের চালক বায়েজিদ খান। সাইদুরের শরীরের ১৪ শতাংশই পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সক।
সাইদুর বলেন, তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে থাকেন। দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের রমনা জোনে তিনি কনস্টেবল পদে নিয়োজিত। একই পদে ছিলেন ফেরদৌস। গতকাল সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত সাইদুরের ডিউটি ছিল বেইলি রোড এলাকায়। গাড়ির চাপ বাড়ায় রাত ১০টা থেকে বাংলামোটর মোড়ে তাঁর আবারও দায়িত্ব শুরু হয়। একই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন ফেরদৌসও। রাত ১১টার দিকে গাড়ির চাপ কমার পর তাঁরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাসটি আসার পর তিনি আর ফেরদৌস বাসে উঠে আরেকজন পুলিশ সহকর্মীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ওই সহকর্মী বাসে ওঠার আগেই এ নাশকতার ঘটনাটি ঘটে।
সাইদুর আরও বলেন, স্ত্রী শিরিন আক্তার ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে তিনি গাজীপুর জয়দেবপুরের হারবাইত গ্রামে থাকেন। তাঁর বড় মেয়ে ফারিয়া ইসলাম (১০) স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে ফিহা মনির বয়স এক বছর। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে পুলিশে চাকরি করছেন।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের নিচতলায় ভর্তি আছেন ওই বাসের চালক বায়েজিদ খান। তিনি বলেন, আট-দশ বছর ধরে তিনি ঢাকায় অন্যের গাড়ি চালিয়েছেন। এরপর জমানো টাকা, জমি বিক্রি ও ধার দেনা করে এক বছর আগে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ওই বাসটি কিনেছিলেন। এক বছর ধরেই তিনি পুলিশ আনা-নেওয়ার কাজ করছেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাসটি রেখে সেখানেই তিনি ঘুমাতেন।
দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বায়েজিদ দ্বিতীয়। বাবা আবদুস সালাম, মা মাজেদা বেগম, এক ভাই ও বোন সোনিয়া আক্তারকে নিয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জের বলইকাঠিতে থাকেন। বোন স্থানীয় মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। বড় ভাই আবুল কালাম তেমন কিছুই করেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন বায়েজিদ। সম্বল ছিল বাসটি। আগুনে তাঁর পরিবারের বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকুও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।