নির্বাচনের পর দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হতে পারে। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা প্রতিরোধে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে যুগান্তরকে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র। তার আগে বিরোধী দলের সব কর্মসূচি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার। অবরোধের নামে সহিংসতা, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ সহিংস কর্মসূচি মোকাবেলায় আরও কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে চায় না। জামায়াত দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে ভিন্ন কোনো রূপ যাতে না দিতে পারে সে সতর্কতার অংশ হিসেবে সংঘর্ষ এড়ানোর এ কৌশল নেয়া হয়েছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রটি যুগান্তরকে জানিয়েছে, র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী খুব শিগগির আরও বেশ কিছু এলাকায় অভিযানে নামবে। যৌথবাহিনী সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়ে সাফল্য পেয়েছে বলে মনে করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল বিভাগ। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে সর্বদলীয় সরকারের। বৃহস্পতিবার থেকে সহিংস এলাকা সাতক্ষীরায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল শুরু করেছে। এ জেলায় জামায়াত-শিবিরের হামলায় মারা গেছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। সংখ্যালঘু হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির শীর্ষ এক নেতা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, কোনোভাবেই নির্বাচনের আগে জরুরি অবস্থা জারি করা হবে না। সে সুযোগও নেই বলে মনে করেন তিনি। তবে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা প্রতিরোধে জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে তাদের কারও কারও মত রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য দলের হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে জানিয়ে ওই নেতা বলেন, পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে রাজনৈতিকভাবেও বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্র ১৪ দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপি-জামায়াতের চলমান ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে তিন দিনের এ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল নেতারা তা পালনে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বৃহস্পতিবার ১৪ দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর পাকিস্তানের সংসদের নিন্দা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, প্রতিবাদ এবং চরম নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে বুধবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দল নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মূলত এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। নাসিম জানান, আগামী রোববার দেশের সব উপজেলা, পরের দিন সোমবার সব জেলা এবং মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন তারা। এছাড়া জামায়াত-বিএনপি-শিবিরের নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের শিকার জেলাগুলো সফর করবেন ১৪ দল নেতারা।
যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর বিষয়ে পাকিস্তানি পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব এবং দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের মানুষ হত্যা ও নাশকতা-নৈরাজ্যসহ দেশ এবং জাতিবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রতিক তাণ্ডব ও সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সাতক্ষীরা, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন, জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় ও জনসভার আয়োজনও করবেন ১৪ দল নেতারা। এসব জনসভায় ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন, বক্তৃতা করবেন।
বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা মোকাবেলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ৫ জানুয়ারি সাংবিধানিক কারণেই নির্বাচন করতে হবে। আর এ নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সফল করতে ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের ব্যানারে প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এবং আদালতের রায় কার্যকর করার বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নাসিম বলেন, দেশের সব গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিএনপি-জামায়াতীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।