বিএনপি-জামায়াতকে জঙ্গি দল চিহ্নিত করতে তৎপর সরকার

0
624
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপি-জামায়াত জোটকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী ড. আবুল মাল আব্দুল মুহিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনার সঙ্গে এক বৈঠকে নাশকতা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে জঙ্গি গোষ্ঠী অভিহিত করেছেন। দল দুটিকে এখনি জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করতে মজিনাকে কোনো রাখঢাকা না রেখেই প্রস্তাব করেন তিনি। তবে মজিনা এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি।

সরকার অন্য রাষ্ট্রগুলোকে এ ব্যাপারে অবহিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশি-বিদেশি সব মহলে জামায়াতের নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ইস্যু করে এর সুফল ঘরে তুলতে চায় সরকার।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ফারুক খান ও প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এ ব্যাপারে কাজ করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে টেলিফোনে কথা বলার সময় বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনকে জঙ্গি কায়দার আন্দোলন বলে তুলে ধরেন বলে কয়েকটি সূত্র জানায়। এ ছাড়া অন্য প্রভাবশালী নেতারাও কূটনীতিকপাড়ায় বিভিন্ন আয়োজনে নাশকতার ইস্যু তুলে কথা বলছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এরই মধ্যে প্রতিবেশী ভারতকে এ ব্যাপারে বুঝে আনতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর ফলে এ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতের মনোভাব এরই মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, এ দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটুক সেটা নিজেদের স্বার্থেই ভারত চায় না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট জঙ্গি রূপ ধারণ করেছে। তারা আগুন দিয়ে, পেট্রলবোমা মেরে মানুষ মারছে। আত্মগোপনে গিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করছে, এর সবই জঙ্গি ‘স্টাইল’। ইন্টারনেট ও মিডিয়ার যুগে দেশ-বিদেশ সবাই এসব দেখছে।

ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য নেতারা জাতীয় পর্যায়ে তাঁদের বক্তৃতা বিবৃতিতে প্রতিনিয়তই বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ডকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে যাচ্ছেন। জঙ্গি ইস্যুটি সামনে তুলে ধরতে নীতিগত সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছেন তাঁরা। বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে তাদের নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অনেকটাই নমনীয় কৌশল নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের নামে নানা ধরনের নাশকতার ঘটনা চলতে থাকলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের তৎপরতা ছিল সামান্য। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় সম্প্রতি কয়েকটি জায়গায় অ্যাকশনে নেমেছে সরকার। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অব্যাহত নাশকতার ঘটনায় জনগণ যখন অতিষ্ঠ, তখনি জনসমর্থন আদায়ে সরকার হার্ডলাইনে গেছে বলে জানা গেছে। দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন এসব তথ্য। তবে তাঁরা এও বলেছেন, সরকারের বদনাম হতে পারে এ আশঙ্কায় বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করতে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে এখনি মুখোমুখি দাঁড়াতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে মাঠে নামলে একটি মহল এটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করবে।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘একটি বিশেষ মহল দেশে সংঘটিত এসব কর্মকাণ্ডকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন। আমার মুখোমুখি দাঁড়ালে তারা সুযোগ পেয়ে বসবে। এটা আওয়ামী লীগ হতে দিতে পারে না।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে একটি মহল বিশেষ সুবিধা নিতে চায়।

নেতারা এসব কথা বললেও নীরব বসে থাকার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতাও ফুটে উঠেছে বলে অনেকে মনে করেন। শেখ হাসিনা সম্প্রতি নিজে নেতা-কর্মীদের মাঠে অবস্থান করার নির্দেশ দিলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে- এমন ঘোষণা দিলেও কার্যত তা দেখা যাচ্ছে না। সারা দেশে কোথাও প্রতিরোধ গড়ে তোলার নজির নেই-ই, নির্বাচনী মাঠে বড় কোনো মিছিলের আয়োজন করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।

গত বুধবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের একটি সভায় মাঠে নামার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামী রবিবার সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও পরে জেলায় জেলায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে। আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এরপর রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনে যাওয়া হবে। তবে এসব সিদ্ধান্ত কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা সময়েই বলে দেবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই মাঠে নেমেছে জনগণের চাপে নেমেছে। এবারও বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এমন জায়গায় গিয়েছে যে মাঠে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, এর পরও ধৈর্য ধারণ করে রয়েসয়ে মাঠে নামার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে আওয়ামী লীগ। সার দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও নেতা-কর্মীরা হত্যার শিকার হলেও অনেকটাই নিশ্চুপ থাকতে দেখা যাচ্ছে নেতা-কর্মীদের।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতার চিত্র দেশে ও দেশের বাইরে সবাই পর্যবেক্ষণ করছে। আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকেও আমরা বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার চিত্র তুলে ধরেছি।’

শেয়ার করুন