চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাই ৭২ ঘণ্টা অবরোধ শেষ না হতেই আগামী শনিবার থেকে ফের ৮৩ ঘণ্টার অবরোধ দিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন।
সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীগুলোকে রাষ্ট্রের মালিক জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না, চলতে দেয়া উচিৎ নয়। আর তাই ১৮ দলীয় জোট মনে করে যে, চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নাটক বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগই শুধু জনগণকে এই আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারবে। কোনো ধরনের কৌশলে বিভ্রান্ত করা কিংবা শক্তি প্রয়োগ করে জনগণকে আন্দোলন থেকে পিছ পা করা যাবে না।’
সারাদেশের অবরোধের চিত্র তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আলোচনার মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছেন। কিন্তু সরকার যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার অশুভ প্রয়াসে নানা কৌশল একদিকে পাতানো নির্বাচনের নাটক চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলন দমনের জন্য খুন, গুম, হামলা, মামলার মত নৃশংসতা ও নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের উপর আজও গুলি চলেছে, আক্রান্ত হয়েছে তাদের বাড়ি-ঘর-প্রতিষ্ঠান, আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছেন বহু নেতাকর্মী।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের কোনো কোনো নেতা বলছেন, সমঝোতার লক্ষ্যে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আর তথ্যমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এই নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। কোনটা সঠিক-এই প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য জনগণকে হয়তো সরকারের অন্য কোনো নেতা কিংবা মন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
‘বিরোধী দলকে ভোট দেয়া হয়নি বলে জাতি অভিশাপ মুক্ত হয়েছে’ প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্যে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তাদের দলের কুৎসিত পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগের এবং মহাজোটের ১৫৪ প্রার্থীকে তথাকথিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে আনার নামে নিজেরাই অভিশপ্ত হয়েছেন বলে জনগণ বিশ্বাস করে। এই অভিশাপের কালিমা প্রধানমন্ত্রীকেই চিরদিন বহন করতে হবে।’
তিনি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্য, বাড়ি-ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে যে উক্তি করেছেন তা উস্কানিমূলক এবং কোনো সরকার প্রধানের মুখ থেকে এমন বক্তব্য শুধু বেমানানই নয়, জাতির জন্য লজ্জাজনক। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের পরিবারের সদস্যদের এবং তাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে সব হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং চলছে তার দায় এখন প্রধানমন্ত্রীর উপরই বর্তাবে।’
দলের এই ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র বলেন, ‘জনগণ চায় তাদের ভোটে নির্বাচিত এবং তাদের কাছে দায়বদ্ধ প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদ। সরকার জনগণকে এই ন্যয্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছে। ফলে তারা ক্ষুব্ধ এবং প্রাপ্য আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত।’
অবরোধ সফল করায় জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জোটের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে, শান্তিপূর্ণভাবে আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর আহুত অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
অবরোধের শেষ দিন সারাদেশে জোটের একজন নিহত, আহত হয়েছেন ৭২২ জন, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৩৩ জন, মামলা হয়েছে ৩ হাজার এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩৪ নেতাকর্মীকে সাজা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।