গত ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালসহ প্রতিটি নির্বাচনের অন্তত দুই মাস আগেই নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে খুব শিগগিরই নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করার কথা বললেও এখন পর্যন্ত তারা তা করেনি। এছাড়াও আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ ঠিক থাকলেও প্রচারণায় নেই দলটি। অবশ্য বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে না আসায় এখন আর এসবে প্রয়োজন মনে করছে না আওয়ামী লীগ। তাই তারা ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নয়, শপথগ্রহণ নিয়ে ভাবছে বলে দলের একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই আওয়ামী লীগের ১৩০, জাতীয় পার্টির (জাপা) ১৮, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ১, জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টির ২টিসহ মোট ১৫৪ আসনেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। যেখানে সরকার গঠনে মাত্র ১৫১টি আসন প্রয়োজন।
এ ব্যাপরে আওয়ামী লীগের অন্যতম এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে না আসায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ভাববার সময় নেই। এখন আমরা ভাবছি ৫ জানুয়ারি পর কখন শপথ হবে। কারণ ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ১৩০টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়াও ১৪ দল, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)সহ ২৪টি আসনে প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই নির্বাচন নিয়ে ভাববার সময় নেই। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন মাত্র ১৫১টি আসন। সেখানে ১৫৪টি আসনে প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এখন ইচ্ছে করলেই ৫ জানুয়ারি পর যে কোনো সময় শপথগ্রহণ করতে পারবেন বিজয়ী প্রার্থীরা।’
বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে, চলবে। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা হলে সংসদ ভেঙে দিয়ে আবার নির্বাচন দেয়া হবে।’ আর এতেই প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ এখন আর নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না।
এছাড়াও বৃহস্পতিবার ১৪ দলের এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনা চলবে। তবে নির্বাচন আর আলোচনা এক নয়। আমরা আশা করেছিলাম প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু তারা নির্বাচনে না আসলেও ৫ জানুযারি নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সরকার গঠন করবে। প্রয়োজনে একাদশ নির্বাচন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হবে।’
দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১৩০ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী প্রার্থীরা নির্বাচন চান না। তারা মনে করেন, কোনোভাবে ৫ জানুয়ারি কেটে গেলেই শপথগ্রহণ করবেন। এরপরই সরকার গঠন করা যাবে।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বাংলমেইলকে বলেন, ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসন জয় লাভ করেছেন প্রার্থীরা। যেখানে মাত্র ১৫১টি আসন দরকার। ফলে সরকার গঠনে আর কোনো বাধা নেই। কিন্তু আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তাই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমরা সরকার গঠন করতে চাই। তাই আগামী ৫ জানুয়ারির পরই শপথগ্রহণ করে আমরা সরকার গঠন করবো।’
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলামেইলকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগই আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে জয় লাভ করে শপথগ্রহণ করে সরকার গঠন করবে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনী ট্রেন ফেল করেছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আর কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে একাশদ নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।’
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ চাড়াই ইতিমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৫৪ প্রার্থী। ফলে ভোটগ্রহণ হবে ১৪৬ আসনে।