পাতানো নির্বাচন থেকে সরে আসায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আটক করা হয়েছে। কয়েকদিন থেকে তিনি সরকারের তত্ত্বাবধানে সিএমএইচ-এ রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে ফিরিয়ে আনার জন্য এরশাদের সঙ্গে সরকার সমঝোতার চেষ্টা করে। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তা না হলে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসবে। সুজাতা সিং-এর সঙ্গে বৈঠকের বক্তব্য এরশাদ মিডিয়ায় প্রকাশ করায় বিপাকে পড়ে দিল্লীর সাইথ ব্লগ। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ভারতের এই অসন্তোষ চাপা দিতেই এরশাদকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, এরশাদ একটি জাতীয় দৈনিকে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য দেয়ায় ভারত অখুশি হয়েছে। আটক এরশাদকে বিদেশ পাঠানোর চেষ্টায় তার পাসপোর্ট নিয়ে গেছে সরকারের বিশেষ সংস্থার লোকজন। অতঃপর গুজব ছড়িয়ে পড়ে এরশাদকে সিংগাপুর নেয়া হচ্ছে। আর সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ জানিয়ে দিয়েছেন দেশ-বিদেশ যেখানেই নেয়া হোক পাতানো নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এরশাদ অটল থাকলে জাতীয় পার্টির সুবিধাবাদী কিছু নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে যাওয়ার কথা প্রকাশ করছে। দলের নেতকার্মীরা এসব নির্বাচনমুখী দালাল নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হওয়ায় চতুর নেতারা নানাভাবে দলের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করছে। ফ্রি স্টাইলে মিথ্যা বলছেন। কখনো বলছেন আমরা এরশাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। আবার গণভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। আবার কেউ যাতে নির্বাচিত হতে পারেন সে জন্য ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলুকে তোয়াজ করছেন। মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার রহস্যজনক আচরণ করছেন। তিনি দলীয় নেতাদের বলছেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি; অন্যদিকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সহায়তায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এমনকি নিজের স্ত্রী নাসরিন হাওলাদার রত্নাকেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করিয়ে নিয়েছেন। অতীতের মতো রওশন এরশাদের রহস্যজনক নিরবতায় দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। নেতা কর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন রওশন এরশাদকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে। ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলুকে ভিওআইপি ব্যবসা দেয়া হয়েছে। মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার আর তার স্ত্রী নাসরিন জাহান হাওলাদার রত্নাকে কক্সবাজারে দুটি হোটেলের প্লট দেয়া হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দু’শ’কোটি টাকা। এছাড়াও আরো কয়েকজন নেতাকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে জাপার বেশ কয়েকজন প্রার্থী টাকা খরচ করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এরশাদের নাম ভাঙ্গিয়ে পাতানো নির্বাচনে গেলেও এরশাদ কোনোভাবেই এ নির্বাচনে থাকবেন না। আটক থাকায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছেন না। তবে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের সকলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকালও মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে বহিষ্কারের অফিসিয়াল কাগজ পরে দেয়া হবে বলে সূত্রের দাবি।
আটক হওয়ার পর এরশাদ জাতীয় পার্টির মুখপাত্রের দায়িত্ব দেন ববি হাজ্জাজকে। কিন্তু র্যাব তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। এদিকে মুখপত্র না থাকায় নির্বাচনী দালাল নেতারা ফ্রি স্টাইলে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গতকালও জাতীয় পার্টির যুগ্মমহাসচিব সিলেটের সেলিমউদ্দীন রওশন এরশাদের বাসায় বৈঠক শেষে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রওশনের নির্দেশেই নির্বাচন করছি। সেলিম উদ্দীন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হওলাদার আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি গতকাল (বুধবার) স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি দেখা করে এসে আমাদেরকে বলেছেন স্যার আমাদেরকে ম্যাডামের (রওশন) নেতৃত্বে নির্বাচনে যেতে বলেছেন। রুহুল আমিন হওলাদার নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তাই তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। কাজী ফিরোজ রশিদও বলেছেন, তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন। নেতাদের ফ্রি স্টাইলের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, স্যার আটক। ববি হাজ্জাজকে জোর করে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জিএম কাদেরের বাসা ঘিরে রেখেছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অবস্থায় দলের নেতাকর্মীদের পিটুনির ভয়ে সুবিধাবাদীরা খেয়ালখুশি মতো কথা বলছেন। যেখানে যা বললে সুবিধা সেখানে তাই বলছেন। আটক এরশাদ মুক্ত হলেই এদের সকলকে বহিষ্কার করা হবে। বৃটেনে অবস্থানরত এইচ এম এরশাদের উপদেষ্টা ও মখপাত্র ববি হাজ্জাজ ইনকিলাবকে বলেন, রওশন এরশাদ ও ফিরোজ রশিদ যা বলছেন তা সঠিক নয়। এইচ এম এরশাদ তার অবস্থানে অটল রয়েছেন। দেশে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নির্বাচনে যাবেন। আমি, জিএম কাদের ও রুহুল আমিন হাওলাদার ছাড়া আর কারো বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। দি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ কখনো অবস্থার পরিবর্তন করেন এবং কোনো কিছু বলেন তা আমার (ববি হাজ্জাজ), জিএম কাদের ও রুহুল আমিন হাওলাদারের মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরবেন। দলীয় নেতাকর্মীদের অন্যদের কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।