বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওবামা প্রশাসন। তবে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর সোয়া ২টায় ‘বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা’ শীর্ষক এক জরুরি শুনানিতে এ সিদ্ধান্ত পাশ করে যুক্তরাষ্ট্র সিনেট।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সময়ে রাজপথে গণহত্যা, সহিংসতা এবং বিরোধীদলবিহীন নির্বাচনে যাওয়ার বিষয় নিয়ে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওবামা প্রশাসন আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে গোটা দেশের অর্থনীতি বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পখাতের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধাপরাধের নিম্নমানের বিচার, ৫ জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচন, গণহত্যা ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার খুবই উদ্ধিগ্ন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের পরামর্শের পরও কোনো রাজনৈতিক উন্নতির লক্ষণ দেখা না যাওয়ার প্রেক্ষিতেই ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
এ জরুরি শুনানিতে মার্কিন সিনেট পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেন্ডেজের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ফরেন এ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রভাবশালী ১৮ জন সিনেটর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এছাড়া ওবামা প্রশাসনের পদস্থ আমলা নিশা দেশাইকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির নেতাদের সমঝোতায় আসার যে পরামর্শ দিয়েছেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা- তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের কাছে ছয়টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তাব পেশ করে সিনেটর রিচার্ড ডারবিন ও চার সহ প্রস্তাবক।
এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ফলপ্রসূ আলোচনায় বসতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও জনগণের চাহিদা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এখনই সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ নিতে এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির পথ তৈরি করতে আহ্বান জানাতে হবে।
আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষকদের সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মতবিরোধ দূর করতে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ফারনান্দেজ-তারানকো যে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন, তা এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিতে হবে।
এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে, মানবাধিকার কর্মীদের হেনস্তা বন্ধে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ‘স্বাধীনতা’ ফিরিয়ে দিতে বাংলদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।
গত ২০ নভেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত পররাষ্ট্র কমিটির শুনানিতেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।