‘বঙ্গবন্ধু সেতুর আয়ুষ্কালে আর ফাটলের আশঙ্কা নেই। ফাটল মেরামতে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।’
চলতি বছরের গত ২৭ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা ফাটল মেরামত শেষে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এভাবেই গ্যারান্টি দিয়েছিলেন। গণমাধ্যমে তা ব্যাপক প্রচারও পেয়েছিল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন সবাই।
তবে সেতুর আয়ুষ্কাল পর্যন্ত যেতে হয়নি। মাত্র দুই মাসের মাথাতেই ফের ফাটল দেখা যায় সেতুতে। এ ফাটল মেরামত কাজের সাত মাস পর আবারও জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে আবারও শুরু হয়েছে ফাটল মেরামতের কাজ।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, সংস্কার কাজে মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিস ব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম, প্রযুক্তিগত সমস্যা, তাপমাত্রা সহনশীল না হওয়া, অসময়ে বৃষ্টিসহ নানা কারণে সাত মাস পর গত নভেম্বর মাসে নতুন করে ফাটল মেরামত কাজে জটিলতা দেখা দেয়।
তাছাড়া সংস্কার কাজ শেষে যান চলাচল উদ্বোধনের দুই মাস পরে সেতুর উভয়পাড়ের ভায়াডাক্টসহ সেতুর মূল অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এনিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে চাপের মুখে সেতু বিভাগ ভায়াডাক্টসহ সেতুর মূল অংশে খানাখন্দ ভরাটের কাজ করে। এটি শেষ হতে না হতেই নতুন করে আবারও এ জটিলতা দেখা দেয়।
সূত্রমতে, গত ২৭ এপ্রিল অনেকটা তড়িঘড়ি করেই ২৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর ফাটল মেরামত কাজ শেষ করে ফলক উন্মোচন ও যানচলাচল উদ্বোধন করেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওইদিন সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) প্রশংসা করে তিনি গ্যারান্টি দিয়ে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতুর ফাটল মেরামতে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সেতুর আয়ুষ্কালে আর ফাটলের আশঙ্কা নেই।’
এসময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন- চায়না দুতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স কিউ গুয়াংজু, নাগরপুরের সংসদ সদস্য আব্দুল বাতেন, সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী কবির আহম্মেদ, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার প্রমুখ।
যোগাযোগমন্ত্রীর ওই গ্যারান্টির পরেও ফাটল মেরামত কাজে ফের জটিলতা দেখা দেয়। কাজ চলাকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় ‘মেয়াদোত্তীর্ণ আঠা ও পাউডার দিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু সেতুর ফাটল মেরামত কাজ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তা নজরে নেয়নি সেতু বিভাগ।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু সেতুতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘনঘন অবরোধ ও হরতালে সেতু দিয়ে যানচলাচল না করায় দুটি লেন বন্ধ করে মেরামত কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি। উত্তর লেন বন্ধ করে ১৮ নং পিলার থেকে ২০ নং পিলার পর্যন্ত কাজ করা এসএমএ অংশ আবারও তুলে পুনরায় মেরামত করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী কবির আহম্মেদ বঙ্গবন্ধু ও সেতু সাইট অফিসের সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো কিছু বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এর ৮ বছর পর ২০০৬ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দেয়। আর এ সংবাদটি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়। ফাটলের কারণ নির্ণয় এবং মেরামত করতে ঠিকাদার নিয়োগ করতেই চলে যায় ৫ বছর।
২০১১ সালের ২৬ মে ফাটল মেরামতের দরপত্র চূড়ান্ত করে সিসিসিসিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ফাটল মেরামত কাজের মেয়াদ নির্ধারণ করে দেয়া হয় ২০১১ সালের ১ জুন থেকে ২০১২ সালের মে মাস পর্যন্ত ১ বছর। দরপত্রে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সর্বনিম্ন দর দাখিল করে ২৪৩ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে এক বছর মেয়াদী মেরামত কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে দুই বছর। এতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা।