মন্ত্রীর গ্যারান্টির পরেও ফাটল‘একাত্তরের দিনগুলো’ লিখে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ২৫ মার্চ কালোরাত এবং ’৭১-এর ৯ মাস যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংস ভয়াবহতার চিত্র বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। সেই ’৭১-এর দিনগুলো থেকে ২০১৩ সালের দিনগুলোর খুব বেশি পার্থক্য নেই। ক্ষেত্র বিশেষে ভয়াবহতা আরো বেশি। সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ায় সাধারণ মানুষ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আলেম-ওলামা, ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার অবস্থা ভয়াবহ। ১২০ টাকা পিঁয়াজের কেজির দেশে মানুষের জীবন যেন সবচেয়ে শস্তা। রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী আর উৎপাদিক পণ্য বিক্রি করতে না পারায় কৃষকদের অবস্থা করুণ। আলেম-ওলামাদের ওপর শাসক দলের বছরব্যাপী জুলুম-নির্যাতন, পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র শাসক দলের নেতাদের আদেশ-নির্দেশে কিছু দলবাজ পুলিশ জনগণকে দমনে ব্যবহার করছে। তারপরও পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে সরকার। দিল্লির তাই ইচ্ছা। জনগণের ভোটের অধিকার কৌশলে কেড়ে নিয়ে ১৫৪ জনকে অনির্বাচিত ‘নির্বাচিত এমপি’ করা হয়েছে। ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে বাকিদের নির্বাচিত করতে মরিয়া সরকার। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন নিজেদের করা আরপিও ভঙ্গ করে সরকারের ইচ্ছা পূরণে তৎপর। ‘সব দলের অংশগ্রহণে’ নির্বাচনের দাবির আন্দোলনে সহিংসতা, পুলিশের গুলি, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের দাবি ‘সারাদেশে চলমান সহিংসতায় মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’
সারাদেশ বিস্ফোরণোন্মুখ। ভোটের অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এ অবস্থায় সরকার র্যাব-পুলিশ-বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী গঠন করে মাঠে নামিয়েছে আন্দোলনকারীদের ঠান্ডা করতে। কোটি মানুষ আন্দোলনের সম্পৃক্ত তারা কতজনকে ঠান্ডা করবে? আর গ্রেফতার করে কতজনকে জেলখানায় জায়গা দেবে? ’৭১-এর পাকিস্তান সরকারের স্টাইলেই সর্বদলীয় (!) সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সামসুল হক টুকু জানিয়েছেন, যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা থাকবে। এর আগে বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মিছিলকারীদের (বিএনপি-জামায়াত) ঘরে ঘরে গিয়ে হত্যার নির্দেশ দেন। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় পাতানো নির্বাচন নিয়ে দেশের সর্বমহল উদ্বিগ্ন। শুধু দেশের মানুষ নয়, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য, চীনসহ প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান নাভি পিল্লাই বলেছেন, বাংলাদেশে যেভাবে সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে তার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোয়ার্তুমি করে পাতানো নির্বাচন থেকে সরে না আসার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকরা প্রতিবাদ করে বিজয় দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যায়নি। সারাবিশ্বের উদ্বিগ্নতার মধ্যেও লোক দেখানো নির্বাচন করতে অনড় সরকার। তারা এ কাজে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ সাংবিধানিক পদে থেকেও ‘সরকারের অনুগত ভূত্যের’ মতোই জনগণকে ভয় দেখিয়ে নির্বাচন করতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়ে নির্বাচন ঘটাতে চাচ্ছেন। অথচ সরকার ২০০৯ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সশস্ত্র বাহিনীর নাম বাদ দেয়া হয়েছিল। এই সিইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই (সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন হলে সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে ভোটকেন্দ্র দখল সম্ভব হবে না এ মানসিকতা থেকেই আরপিও থেকে সেনাবাহিনী বাদ দেয়া হয়)। অথচ দেশের বর্তমান অবস্থায় জনগণকে সেনাবাহিনীর ভয় দেখিয়ে নির্বাচন করার জন্য দেশের সূর্যসন্তান সেনাবাহিনীকে নামানোর চেষ্টা চলছে। প্রশ্ন হলো দেশের অহঙ্কার সেনাবাহিনী জনগণের বিপক্ষে নামবে কেন? সেনাবাহিনীতে যারা কর্মরত তারা সকলেই এদেশেরই সন্তান। তাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এদেশে ভোটার। সরকারের এই কর্মকান্ডে তারাও ভুক্তোভোগী। তাদের ভোটের অধিকার যারা হরণ করছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নামবে কেন? জনগণের সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে নামবে কেন? দেশের সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে তরুণ-তরুণী, শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যুবক এবং নতুন প্রজন্ম মনে করেন এখনো রাজনীতির নষ্ট দলীয়করণের ঊর্ধ্বে রয়েছে সেনাবাহিনী। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, বিচার বিভাগ, সংসদ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দলীয়করণের অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক (অবশ্য এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক যোগ্য মেধাবী কর্মকর্তা, ব্যক্তি রয়েছেন রাজনৈতিক কারণে তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়)। একমাত্র সেনাবাহিনীর মধ্যে এখনো দলীয়করণের প্রভাব ফেলতে পারেনি শাসকরা। সর্বদলীয় (!) সরকারের আজ্ঞাবহ বোধবুদ্ধিহীন, মানবতার চিন্তাহীন কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দেশপ্রেমিক সেই সেনাবাহিনীকে পাতানো নির্বাচনে ‘মাঠে নামিয়ে’ সর্বমহলে আস্থায় পেরেক ঠুকতে চাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে উঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান আর্মির হাতে ধরা দেয়ার পর দিশেহারা জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে সেনাবাহিনী। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন সেনাবাহিনীর অফিসাররা। ‘পরাজিত হলেই ফাঁসি’ নিশ্চিত জেনেও সেনাবাহিনীর (বাংলার দামাল ছেলে) সদস্যরা (পুলিশ, নৌবাহিনী, পুলিশ, বিডিআরও ছিল) রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় ৬৭৫ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ৫২০ জনই সশ¯্র বাহিনীর সদস্য। জনগণের অহঙ্কার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা, ঐতিহ্য। মুক্তিযুদ্ধের পর দুর্নীতি দমনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা রয়েছে। ’৭০-এর শেষ দেশের সংকটময় মুহূর্তে উদার গণতন্ত্র চর্চায় সেনাবাহিনী দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছে। দিল্লির কূটচালে বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তার ক্ষমতা দখলের চেষ্টা প্রতিহত করেছে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক ও সিভিল প্রশাসনে থেকে দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ’৮১ সালে কিছু বিপথগামীর হাতে জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর সেনাবাহিনীর জোয়ানরা গর্জে উঠেছে; বিপথগামীদের প্রতিহত করেছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চাকে গতিশীল করতে ’৯০-এর পট পরিবর্তনের সময়ও সেনাবাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে জনগণের কাতারে নেমে। এমনকি ২০০৭ সালে লগিবৈঠা দিয়ে মানুষ খুনের নৃত্যের রাজনীতিকে প্রতিহত করে জনগণের স্বার্থে ড. ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। সব সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষে থেকেছে। শুধু দেশের মধ্যেই নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করেছে। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বিশ্বের দেশে দেশে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেখানেও সবচেয়ে বেশি সুনাম অর্জন করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগময় মুহূর্তে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনী জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। হাতিরঝিলকে নয়নাভিরাম করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইল্যা, সিডর ও ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা আত্মমানবতার সেবা করেছে। নির্বাচন কমিশনের হয়ে ভোটারদের আইডি কার্ড করেছে তারা। অথচ এই সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল এক সময়। ‘আইনের শাসন চাই না/ বঙ্গবন্ধুর শাসন চাই’ বলে যারা ঘোষণা দিয়েছিল তারা রক্ষীবাহিনী গঠন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করেছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে গঠিত সেনাবাহিনীর বাজেট কমিয়ে দিয়ে রক্ষীবাহিনীকে মাত্রারিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বঞ্চনার মধ্যেও সেনাবাহিনী যেমন জনগণের হয়ে থেকেছে এবং সংকটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে; তেমনি দেশের মানুষও সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থাশীল থেকেছে সব সময়। মু্িক্তযুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং সিপাহি জনতার বিপ্লবের পর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দেশের আমজনতার ভরসাস্থল হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের প্রতি মানুষ আস্থা হারালেও সেনাবাহিনীর প্রতি এখনো আস্থা অটুট। সব দল যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তখন জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী টহল দিয়ে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে সহায়তা করেছে। ৪২ বছর গড়ে উঠা গৌরবের এই দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে ৫ জানুয়ারির অনুষ্ঠেয় বিতর্কিত পাতানো নির্বাচনে মাঠে নামিয়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। কেন এই অপচেষ্টা? কার স্বার্থে এই চেষ্টা? দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। দেশের আমজনতা, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, জাতিসংঘ, দাতাদেশ, সংস্থাসহ বিশ্বের সবাই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবি করছে। অথচ জনগণ ভোট দেবে না বুঝতে পেরে দিল্লির প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীবিহীন নির্বাচনের নাটক করে আবার ক্ষমতায় বসতে চাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা কি স্বাভাবিক ঘটনা? জনগণের ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্রের সঙ্গে কি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এতো বিপুল সংখ্যক অনির্বাচিত ‘নির্বাচিত প্রতিনিধি’র কাহিনী যায়?
চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে দেশ। এ অবস্থায় প্রতিদিন সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাস-তা-ব, পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা জনরোষের ভয়ে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছেন না। অধিকাংশ প্রার্থী ঢাকায় বসে রয়েছেন। তৃর্ণমূলের যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাও নিরাপত্তাহীনতায় ভোটের প্রচারণায় নামতে পারছেন না। সারাদেশে আগুন জ্বলছে। নির্বাচন প্রতিহতে বিরোধী দলের অবরোধ, হরতাল কর্মসূচিতে দেশ অচল হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে অধিকাংশ জেলার যোগাযোগ নেই। অনেক জেলায় প্রশাসন-ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সবখানে আতঙ্ক। সচিবালয়ে যারা কাজ করেন তারাও আতঙ্কে দিনযাপন করছেন। দেশে অস্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ উৎকণ্ঠিত। ভয়ে ঘর থেকে বের হন না। অথচ এ অবস্থায় শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় বসাতে নির্বাচন নামের ‘নাটক’ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন। যৌথ বাহিনী নামিয়ে জনগণকে গ্রেফতার করে, জুলুম-নির্যাতন করে, ভয় দেখিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব এতোদিন মনে করতো নির্বাচন কমিশন। যার জন্য নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন আরপিও থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা দম্ভোক্তি করেছে বিএনপির আন্দোলনের মুরোদ নেই। জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। পৃথিবীর কোনো শক্তি নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি কেয়ামত হলেও নির্বাচন হবে বলে তারা হুঙ্কার দিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। পাতানো নির্বাচন প্রতিহতের ডাকে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এখন শুধু যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখিয়ে শেখ হাসিনার ইচ্ছাপূরণের নির্বাচন ঘটানো সম্ভব নয়। সে জন্যই জনগণের ভরসা সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের সময় মাঠে নামানোর জন্য সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ‘জনতার কথা’য় তরুণ-তরুণী, ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন টকশোতে বিশিষ্টজনেরা এ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নামানো উচিত নয় বলে মতামত দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য হলো সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা নষ্ট করা উচিত নয়। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে সেখানে সেনাবাহিনী মাঠে নামলে জনগণের ‘ভোটের অধিকার’ নিশ্চিত হতো। ভোটে অনিয়ম, ভোট ডাকাতি বন্ধ হতো। কিন্তু যে নির্বাচনে ভোটার দূরের কথা প্রার্থীই পাওয়া যায় না; জনগণ নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দেয়; ক্ষমতাসীনদের খুশি করতে সে নির্বাচনে জনতার বিরুদ্ধে মাঠে নামলে সেনাবাহিনীর গৌরবময় অর্জনের ওপর কালিমা লেপন হবে। অবশ্য রাজনীতিকদের ব্যর্থতায় দেশের জনগণের প্রয়োজনে তারা এগিয়ে এলে অন্যকথা। কারণ তারাও এদেশের সন্তান। ১/১১ আগে দেশের রাজনৈতিক সহিংসতা যে পর্যায়ে গিয়েছিল তা থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা ছিল সেনাবাহিনীর নৈতিক দায়িত্ব। যথাযথভাবে সে দায়িত্ব পালনের পর ভোটের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু করে দিয়ে তারা ফিরে গেছে।