আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ব্যর্থ করার লক্ষ্যে ভয়াবহ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ভোট বর্জনকারী মহল। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী মালপত্র ছিনতাই, প্রার্থীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর হামলা, তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ নানা কৌশল নেওয়া হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বৈঠকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, সহিংসতা ততই বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সভায় কয়েকজন মন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বিজিবি মহাপরিচালকসহ সব বাহিনীর প্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উদ্বেগ ব্যক্ত করে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার সংগ্রহ করা তথ্য আগেই বিরোধী দলের লোকদের হাতে চলে যাচ্ছে। এরপর নাশকতাকারীরা গোয়েন্দাদের তথ্য বিকৃত করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করছে।
সভায় গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিনিধি বলেন, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বিরোধী দল টাকা দিয়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী খাটাচ্ছে। নির্বাচন ব্যাহত করতে এসব ভাড়াটিয়া লোককে দিয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পরিকল্পনার মধ্যে নির্বাচনী মালপত্র ছিনতাইসহ প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর হামলার বিষয়টিও রয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য আগেই বিরোধী দলের লোকদের কাছে চলে যায় উল্লেখ করে সভায় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরে বিরোধী দলের লোক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি আরো বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের টেলিফোনে সরাসরি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সেই নির্দেশনা দিয়ে স্থানীয় নেতারা কর্মী-সমর্থকদের আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করছেন। সভায় কয়েকজন মন্ত্রীও এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
সভায় ভূমিমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসররা সাম্প্রতিক সময়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তা ১৯৭১ সালের গণহত্যাকেই মনে করিয়ে দেয়। তারা বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালেও চলন্ত বাসে পেট্রলবোমা মারা হয়নি। যেকোনো মূল্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সফল করার আহ্বান জানান তিনি।
বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রেলে ইলেকট্রনিক ট্রলির পর্যাপ্ত ব্যবহারের প্রতি রেলপথমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রেলপথে নাশকতা রোধে তিনি গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে কাজে লাগানো এবং রেললাইনের পাশে রাস্তা থাকলে সেখানে স্কুটার স্কোয়াড গঠনের পরামর্শ দেন। পরে রেলমন্ত্রী বলেন, ইলেকট্রনিক ট্রলির সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। বেশ কিছু ট্রলি তৈরি করা হচ্ছে। সারা দেশে এক হাজার ৪১টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে আট হাজার ৩২৮ জন আনসার ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সভায় শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন সার্কুলেশনে সংবাদ পরিবেশনায় আরো সংযত হওয়ার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী মিডিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।’ এক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু মিডিয়া অর্থের বিনিময়ে কলে গিয়ে নাশকতার ছবি তুলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করছে। এসব মিডিয়ার টেলিফোন নম্বর ট্র্যাকিং করা দরকার।’