মাঠে নেমে পড়েছে যৌথ বাহিনী৷ পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সমন্বয়ে গঠিত এই বাহিনী দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করবে৷ বিশেষ করে জামায়াত-শিবির দেশের যেসব এলাকায় বেশি ‘তাণ্ডব’ চালিয়েছে সেই সব জায়গায় জোরেশোরেই অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷
রোববার বিকেলে এই ঘোষণার পর রাত থেকেই অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী৷ সোমবার সারাদিনই তাদের অভিযান চলেছে৷ প্রথমদিন সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় তারা৷ এতে পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন সদ্য যোগ দেয়া সাতক্ষীরার এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল করিম৷ তিনি বলেন, ‘সব সন্ত্রাসী’ গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। তবে স্থানীয় জামায়াত নেতাদের দাবি, অভিযানে একজন নিহত হয়েছে৷
এদিকে মঙ্গলবার থেকে আবার ৭২ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট৷ অবরোধের মধ্যেই যৌথ বাহিনীর অভিযান পুরোদমে চলবে বলে জানান মঞ্জুরুল করিম৷
এর আগে রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই বৈঠকেই যৌথ বাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ বৈঠক শেষে তথ্য এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশের মানুষের জানমাল ও সম্পত্তি রক্ষায় সরকারের পক্ষে যা যা উদ্যোগ গ্রহণ করার দরকার তাই করা হবে৷ বিদ্যমান আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অগ্রগতিতে আশু করণীয় সম্পর্কে কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে৷ এসব সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ওই বৈঠকেই সাতক্ষীরায় প্রথম যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে একাধিক মন্ত্রী স্বীকার করেন৷
গত ২৬ নভেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের তিন দফায় ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সাতক্ষীরা এক ‘আতঙ্কের জনপদে’ পরিণত হয়৷ ওই সময় থেকে সোমবার পর্যন্ত সেখানে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নেতাসহ ১৭ জন নিহত হন৷ তাদের মধ্যে নয়জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷ বিভিন্ন সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে জেলা শহরের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি বলে অভিযোগ ওঠে৷ এ অবস্থায় ১১ ডিসেম্বর ব্যর্থতার অভিযোগে জেলার পুলিশ সুপার মোল্যা জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়৷
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর থেকে সাতক্ষীরায় শুরু হয় জামায়াত-শিবিরের ‘তাণ্ডব’৷ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে৷ চার দিনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০টিসহ ৬০টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়৷