আরো কঠোর অবস্থান খালেদার

0
675
Print Friendly, PDF & Email

আগামী জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রাজনীতিতে সংঘাত-সহিংসতা তত বাড়ছে। নির্বাচনকে ঘিরে চলমান রাজনৈতিক সংকটের কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই দশম জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সর্বত্র বিরাজ করছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী টানা অবরোধ কর্মসূচিতে বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। এ অবস্থায় সংকট কাটিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা, ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ শরন, চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নির্ধারিত ও অনির্ধারিত বৈঠক করছেন। জোর কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের বার্তা নিয়ে আগামী ৭ ডিসেম্বর আবারো ঢাকায় আসছেন সহকারী মহাসচিব ওস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ফার্নান্দেজ তারানকো ঢাকা সফরে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে জাতিসংঘের সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরবেন। চলমান সংকট নিরসনের উপায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ শীর্ষ পাঁচ নেতার মুক্তি দাবি করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আলব্রেখট কনজে।
চলমান সংঘাত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ কথা জানা গেছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন সরকারের একদলীয় নির্বাচনের উদ্যোগকে জাতিসংঘ কখনো স্বীকৃতি দেবে না। বিশেষ করে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সফরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিএনপি। দলটির আশা চলমান এই পরিস্থিতি উত্তরণ ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে বলেও আশা করছে ১৮ দল। বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে বলেন, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর আসন্ন সফরের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। জাতিসংঘের অবস্থান জানার ওপর কর্মসূচিও নির্ভর করবে।
এদিকে তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে দেশব্যাপী ৭১ ঘণ্টা লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সপ্তাহের প্রতিদিনই রাজপথে কর্মসূচি থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা জানান, আজ শুক্রবার অবরোধে সারাদেশে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শুরু হবে আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি। মনোনয়ন জমাদানের শেষদিন অর্থাৎ ২ ডিসেম্বর সারাদেশে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরা কর্মসূচি দেয়া হতে পারে।
১৮ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা জানান, ঘেরাও কর্মসূচির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত ঘেরাও না দেয়া হলে অবরোধ কর্মসূচিই চালিয়ে যাবে ১৮ দলীয় জোট। তবে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকোর ঢাকা সফরের জন্য ৬-৮ ডিসেম্বর রাজপথে কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে না।
এদিকে চেয়ারপার্সন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়ার পরও রাজপথে না থাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া হতাশ। বড় বড় পদধারী নেতার ওপর তিনি চরম বিরক্ত। জানা গেছে, আন্দোলনের সার্বিক কর্মকাণ্ড এবার নিজেই তদারকি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে সারাদেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের টেলিফোন নম্বর সংগ্রহ করছেন তিনি। জানা গেছে, প্রয়োজনে আন্দোলনের কৌশলেও পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন বিএনপিপ্রধান। কর্মসূচি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে বিএনপি চেয়ারপার্সন এবার সরাসরি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ মানবকণ্ঠকে বলেন, শুক্রবার বিকেলে দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আন্দোলনের গতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। আন্দোলনের কর্মসূচি আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। পরবর্তী কর্মসূচি কী আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথাসময়েই তা জানানো হবে। সংকট নিরসনে সংলাপের উদ্যোগে নিয়ে ‘একতরফা’ নির্বাচনের পথ থেকে সরে আসতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রিজভী।
গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন ধার্য করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে ওইদিন রাতেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট দেশব্যাপী সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয়। রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত তফসিলের কার্যক্রম স্থগিত করার দাবি জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়। তফসিল প্রত্যাখ্যান করে ওইদিন থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেয়া হয়। পরে কর্মসূচির সময় দুই দফায় আরো ২৩ ঘণ্টা বাড়ানো হয়। আজ শুক্রবার ভোর ৫টায় বিরোধী জোটের অবরোধ শেষ হচ্ছে।

শেয়ার করুন