আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ বিরোধী ইসলামী দলগুলো। নির্বাচনী মাঠ তৈরিতে সংগঠনগুলোর নেতারা এখন মাঠে আছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। সরকারের দমন পীড়ন ও ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগ এনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে লালকার্ড দেখাতে প্রস্তুত। এমনটি জানিয়েছেন কয়েকটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। তবে বেশ কয়েকটি সরকার সমর্থক সংগঠন জামায়াত ও হেফাজতের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে ও নির্বাচনের জন্য তাদের ভূমিকা এখনো দেখা যাচেছ না।
১৮ দলীয় জোটভূক্ত ইসলামী দলগুলো ছাড়াও হেফাজত সমর্থিত ইসলামী দলগুলো এখন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে একাট্টা। এরইমধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন ইসলামী দল তাদের প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত করে রাখছে। সময়মতো জোটের কাছে তাদের প্রার্থীদের তালিকা তুলে দেয়া হবে বলে জানান নেতারা। তবে এ ব্যাপারে হেফাজতের কোন নেতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।
সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন, সরকারের দমন পীড়ন ও পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবিতে ইসলামী দলগুলোর নেতারা আগামী নির্বাচন নিয়ে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। হেফাজত সমর্থিত ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। তাদের দাবি, তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বর্তমান মহাজোট সরকারকে এ দেশের জনগণ লালকার্ড দেখাবে।
ইসলামপন্থি দলগুলোর শীর্ষ নেতারা মনে করেন, ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলন নিয়ে হেফাজতের ব্যানারে মাঠে নামার পর হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন তাদের ভাগ্যেই বেশি জুটেছে। সেজন্য বিএনপির কাছে ২৫- ৩০ আসন নিয়ে দাবি পেশ করা হলেও চুড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপি’র কাছ থেকে সম্মানজনক আসন নেয়ার চেষ্টা করবেন ইসলামী দলের এসব নেতারা।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্তর্ভূক্ত ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস ছাড়াও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী দলসমূহ ও খেলাফত আন্দোলনসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এসব দলের নেতারা হেফাজতের আন্দোলনের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এদিকে দল, দলীয় প্রতীক ও দলের শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে এখন ব্যস্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে দলীয়ভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি সবসময়ই তাদের থাকে। নিজের উদাহরন দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের নানা বাধা-বিপত্তি, হামলা, মামলা ও গ্রেফতারী পরোয়ানার কারণে আত্মগোপন থাকলেও তিনি কক্সবাজার-২ নির্বাচনী এলাকার মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
ইসলামী দলগুলোর নেতারা বলেন, গত ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচীতে অভিযান চালানোর পরপরই ব্যাপক ধরপাকড় চালায় পুলিশ। কিন্তু কৌশল হিসেবে তারা কিছুদিন ধরপাকড়ে নমনীয়তা দেখায়। তখন হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হলেও দীর্ঘদিন আর কোনো শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এতে হেফাজতের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইসলামী দলগুলোর নেতারা আবার প্রকাশ্যে এসে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে থাকেন। হঠাৎ করে গত ২ সেপ্টেম্বর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর আবারো হেফাজতের নেতকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে গা-ঢাকা দেন এবং অনেকটাই সাংগঠনিকভাবে নিস্ক্রিয় বললে চলে। হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা পাঁচটি মামলায় ঐদিন তাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
মুফতি ওয়াক্কাস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যশোর-৫ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরশাদ সরকারের সময়ে তিনি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওয়াক্কাসের দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম চুড়ান্ত পর্যায়ে জোটের কাছ থেকে কমপক্ষে পাঁচটি আসন চাইবে বলে দলের প্রচার সম্পাদক ওয়ালী উল্লাহ আরমান জানান।
এ দলের সাবেক এমপি ও হেফাজত নেতা শাহীনূর পাশা চৌধুরী সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। মহাসচিবকে গ্রেফতারের পর তিনিসহ দলের অন্য নেতারা এখন আবার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নেয়ার জন্য যে ক’জন নেতাকে দোষারোপ করা হয়, তাদের একজন হচ্ছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব ও হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ। অজ্ঞাতস্থান থেকে মাঝে-মধ্যে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিলেও ঘটনার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
সম্প্রতি তাকে হেফাজতের কেন্দ্রিয় কমিটি থেকে বাদ দেয়ার ঘটনা শুনা গেলে ও পরবর্তীতের বাদ দেয়া থেকে সরে আসে হেফাজতের আমীর আল্লামা শফী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে। তিনি চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর আগে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ১ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর মুহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসা মিলনাতয়নে এক সভায় জোটের সহকারি মহাসচিব মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেলকে নংসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনের ১৮ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
তিনি হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটির প্রচার সেলের প্রধান হিসেবেও কাজ করছেন। জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী নরসিংদী-৩ থেকে নির্বাচনে অংশ নিবেন। এ জোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব অ্যাডভোকেট, মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যব, মাওলানা মইনুদ্দিন রুহি, মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ, মাওলানা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা ফজলুর রহমান, মুফতি সাখাওয়াত হোসেন, মাওলানা আবদুল মোমিন শের রহমান, মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদার, মাওলানা আবদুস সামাদ, মাওলানা এহতেশাম সরোয়ার, শেখ লোকমান হোসেন, মাওলানা মেহেদী হাসান ও মাওলানা আজিজুর রহমানসহ আরও বেশ ক’জন ঐক্যজোট নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও সারাদেশে ২৫-৩০টি আসনে জোটের নেতারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান ও সহকারি মহাসচিব মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদীও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে দলীয় সুত্রগুলো জানায়।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন এককভাবেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। দলটি ২৫০ আসনে প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত করেছে।