এরশাদ নির্বাচনে আসায় পেয়েছে একশত ত্রিশ কোটি টাকা !

0
110
Print Friendly, PDF & Email

নির্বাচনে আসার জন্য জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ প্রতিটি আসনের বিপরীতে এক কোটি করে তিনশত কোটি টাকার একটি রফা করেছেন। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে প্রথম পক্ষের কাছ থেকে এরই মধ্যে তিনি পেয়ে গেছেন একশত ত্রিশ কোটি টাকা। এদের কাছে থেকে পাওনা আরও ৭০ কোটি টাকার জন্য তিনি তাগাদা দিচ্ছেন। আর মধ্যস্থতায় জড়িত তৃতীয় পক্ষ, ভিন্ন একটি দেশ থেকে আরও একশত কোটি টাকার যোগান আসার কথা। সে টাকার জন্যও অপেক্ষায় আছেন এরশাদ। এরশাদ টাকা হাতে পাওয়ার আগে নির্বাচনে নেমে পড়তে চান না। এ কারণে তিনি দাবি তুলেছেন নির্বাচন পেছানোর।

এছাড়া, নতুন নির্বাচনী বিধিমালার সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের জন্য বড় অংকের সালামি নিয়ে হাজির হয়েছেন এরশাদের কাছে। এই সব ব্যবসায়ীর অনেকেরই ব্যাংক-ঋণের ঝামেলা থাকায় তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতেও সময়ের প্রয়োজন। সে কারণেও এরশাদ মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি তুলেছেন।

প্রথম পক্ষের কাছ থেকে এখনও পুরো টাকা না পাওয়ায় এবং ধনী-ব্যবসায়ী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কে ঋণখেলাপী আর কে তা নয় সে বিষয়ে খোঁজ-খবর করে, কার কাছ থেকে সালামি হিসেবে কত টাকা নেবেন, সে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় এরশাদ এখন মধুর বিড়ম্বনায় ভুগছেন। নতুনদিনের সূত্রগুলো বলছে, প্রকৃত পক্ষে এ কারণেই দশম সাধারণ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ পিছানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। যদিও প্রকাশ্যে বলছেন, সংসদের তিনশত আসনে বিচার-বিবেচনা করে মনোনয়ন দিতে আরও সময় প্রয়োজন বলে এই সময় বৃদ্ধির দাবি।

নতুনদিনের কয়েকটি সূত্র বলছে, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ চাইছেন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ যেন ১৫ জানুয়ারির আশেপাশে হয়। নিদেন পক্ষে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় বাড়ানোর দাবি করছেন তিনি।

এদিকে এরশাদকে নিয়ে সরকারের মধ্যেও সন্দেহ ক্রমেই ফিরে আসছে। গত সাধারণ নির্বাচনের আগে বিএনপির কাছ থেকে নির্বাচন করার খরচ-পাতি হিসেবে অগ্রিম টাকা নিয়েছিলেন কিন্তু পরে তিনি মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে যান। অবশ্য বিএনপির এক শীর্ষ নেতার কাছ থেকে নেওয়া ওই টাকা এরশাদকে ফেরত দিতে হয়েছিল। এছাড়া, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে নিজ হাতে চিঠি লিখে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জানিয়ে ছিলেন, তিনি অতীতে অনেক ভুল করেছেন, আর না, আগামীতে খালেদা জিয়ার সঙ্গেই থাকবেন। কিন্তু দু’দিন পরেই সেই চিঠির কথা ভুলে উনি নির্বাচনে চলে আসেন।

এরশাদের এই ‘যাচ্ছেতাই অতীতের’ কারণে তার ওপর পুরো ভরসা রাখতে পারছেন না আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই। এই নেতারা এরশাদকে তেমন গুরুত্বও দিতে চান না। কারণ, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করা জরিপে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে ভোট হলে এরশাদের জাতীয় পার্টির মোট ভোটের কমবেশি ৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে। সরকারের ভোট আছে কমবেশি ৩০ শতাংশ। এই প্রায় চল্লিশ শতাংশ ভোটারকেও ভোটকেন্দ্রে আনা সম্ভব হবে কি না তা খুব অনিশ্চিত। সুতরাং আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের মতে, এই পরিস্থিতিতে দেশে-বিদেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। সুতরাং এরশাদের ওপরে অধিক গুরুত্ব দিতে তারা নারাজ।

অবশ্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে এখনই নির্বাচন করে ফেলার পক্ষে। তারা মনে করছে, ভোটার উপস্থিতি যাই হোক না কেন, কোনভাবে নির্বাচন করে ফেলতে পারলেই তারা পরবর্তী বিষয়গুলো ‘ম্যানেজ’ করতে সক্ষম হবে। দিনে দিনে সাধারণ নির্বাচনের বৈধতা-অবৈধতার প্রশ্নটি ম্লান হয়ে যাবে। এই পক্ষ এরশাদকে সাথে রাখার জন্য মরিয়া। তাদের যুক্তি, এরশাদের কারণে যদি ৫-৬ শতাংশ ভোট বেশি কাস্ট হয় সেটিই হবে বড় সাফল্য।

এরশাদ নিজেও আওয়ামী লীগকে সন্দেহ করছেন। এরশাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে চুক্তি হয়েছে সে অনুযায়ী ৭০টি আসনে জাতীয় পার্টিকে জিতে আসতে আওয়ামী লীগের সহায়তা করার কথা। কিন্তু এরশাদ সন্দেহ করছেন, ২৫/২৬টার বেশি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেবে না আওয়ামী লীগ। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন নামে নিজেদের প্রার্থিকে জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে শাসক দল।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, ছয় মাস আগে তারা নিজেরা যে জরিপ চালিয়েছে তাতে এরশাদের জাতীয় পার্টি জিতে আসতে পারে এমন আসনের সংখ্যা মাত্র আটটি। ওই জরিপ অনুযায়ী মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টি পেতে পারে সর্বোচ্চ ২৫টি আসন। এসব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা মন্তব্য করেন, সব মিলিয়ে এরশাদ যেমন আছেন মধুর বিড়ম্বনায় তেমনি এরশাদকে নিয়ে আওয়ামী লীগ আছে বেশ বিপাকে।

শেয়ার করুন