একতরফা নির্বাচন প্রতিরোধে সরকারকে কোনো ছাড় দেবেন না ১৮ দলীয় জোটনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে থাকছে কঠোর কর্মসূচি, যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে টানা আন্দোলনে রূপ নেবে। খালেদা জিয়া নিজেই কর্মসূচি তদারক করছেন। প্রয়োজনে মাঠে নামবেন তিনি। গেল ৭১ ঘণ্টা অবরোধ সফলভাবে পালন করায় তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে নিহতদের স্মরণে সারা দেশে আজ শুক্রবার বাদ জুমা গায়েবানা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন সিনিয়র নেতা। রোববার থেকে কর্মসূচি শুরু হলে শনিবার সারা দেশে বিােভ কর্মসূচি থাকবে। সূত্র জানায়, গায়েবানা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠানের জন্য সারা দেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রস্তুতিও নিয়েছেন। বিভিন্ন জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ধারাবাহিক যেকোনো কর্মসূচির জন্য তারা প্রস্তুত আছেন। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ১৮ দলের আজকের গায়েবানা নামাজে জানাজায় বড় ধরনের সঙ্ঘাত হলে শনিবার থেকেই অবরোধ শুরু হবে। তবে এর পরের সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সফরের কারণে কর্মসূচির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানিয়েছেন, আগামী অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন এভাবে কর্মসূচি চলবে। এর মধ্যেই একটি ফয়সালা হবে বলে মনে করছেন তারা। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিলে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। অন্যথায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিএনপি মনে করছে, এ পর্যন্ত যতগুলো আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে, তার মধ্যে অবরোধ কর্মসূচিতে তারা আশাতীতভাবে সফল হয়েছেন। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে আজ শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত দেশব্যাপী রেলপথ, রাজপথ ও নৌপথে ৭১ ঘণ্টার টানা অবরোধের কর্মসূচিতে ঢাকার বাইরে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। পরিকল্পনা অনুসারে তারা রাজধানীকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সম হয়েছেন। দলটি মনে করে, নেতাকর্মীরা এখন মানসিকভাবে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবলে যাতে কোনো চিড় না ধরে, সে জন্যই দিনণ বিবেচনায় না এনে ছুটির দিনেও কর্মসূচি রাখতে চাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি সূত্র জানায়, সমঝোতা ছাড়া নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হলে তা ঠেকাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। জোটের নেতারা বলছেন, পরিকল্পনা এখন একটাই, তা হচ্ছে আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধ করা। সে অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সূত্র জানায়, যেহেতু নির্বাচন হতে এখনো বেশ কিছু দিন সময় আছে। তাই আগামী আন্দোলন কর্মসূচিতেও ঢাকার বাইরের মহানগর জেলাসহ তৃণমূলপর্যায়কে গুরুত্ব দেয়া হবে। আর রাজধানী ঢাকায় যেহেতু বিএনপি এখনো আশানুরূপ ফল পায়নি, তাই ধীরে ধীরে ঢাকার নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ঢাকায় সিনিয়র নেতারা তখনই মাঠে নামবেন, যখন দু-এক দিনের মধ্যেই সরকারের পতন হবে বলে মনে করবেন তারা। দলের এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে গুলি করছে তাতে করে রাজপথে দাঁড়ানোই কঠিন। তা ছাড়া এমন কোনো নেতাকর্মী নাই যার নামে মামলা নেই। সমালোচকদের জবাবে তারা বলেন, আমরা কি সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেবো? তারা বলেন, অপো করেন সামনের কর্মসূচিতেই ঢাকার চিত্র পাল্টে যাবে। তারা যুক্তি দেখান, এই অবস্থায় যদি সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নামা হয়, তাহলে শক্তি য়ে য়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে যেতে পারে দল ও জোট। তাই ধীরে ধীরে এগোতে হবে। সূত্র জানায়, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে নেতাকর্মীদের সাথে খালেদা জিয়া নিজে টেলিফোনে নিয়মিত কথা বলছেন। কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে খালেদা জিয়া নিজেই রাজপথে নেমে আসবেন। সে েেত্র প্রতিকূল অবস্থা হলে গুলশানের বাসায় না গিয়ে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেবেন।