আল-জাজিরার রিপোর্ট: কাঁপছে বাংলাদেশ

0
664
Print Friendly, PDF & Email

সর্বশেষ রাজনৈতিক সঙ্কট ও রাজপথের সহিংসতায় বাংলাদেশ কাঁপছে। এসব ঘটনায় অচল হয়ে পড়েছে দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দু’ জনেই দেশের পরবর্তী কর্ণধার হতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দু’জনের মধ্যে এবং তাদের রাজনৈতিক বৈরিতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ প্রভাব রেখেছে। ৫ই জানুয়ারি ঘোষিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিরোধী দল আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুদ্ধাপরাধ আদালতের বেশ কিছু ইস্যু। এগুলো উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপি বলছে, এ বিচারে তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে টার্গেট করা হয়েছে। গতকাল অনলাইন আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ: আর দ্য পলিটিক্স পারসোনাল?’ বা ‘বাংলাদেশ: রাজনীতি কি ব্যক্তিগত?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব নিয়ে লেখা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এখন থেকে ৪০ বছরেরও আগে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনও এদেশের মানুষ বিভক্ত। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যে এই বিভক্তি। মূলত আল- জাজিরা গতকাল তার ‘ইনসাইড স্টোরি’ প্রোগ্রামে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রহমান ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রফেসর আসিফ নজরুল ও যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি’র প্রধান উপদেষ্টা মহিদুর রহমানের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। এতে আলোচকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। তারই ভিত্তিতে অনলাইন সংস্করণে ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি ও তার মিত্ররা চায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। এরই মধ্যে পালিত হলো অবরোধ। তাতে বেশকিছু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এমনটাই আইন ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা বিতর্কিতভাবে তা বাতিল করে দেন ২০১১ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে তিনি গঠন করেছেন নির্বাচনকালীন বিশেষ জোট, এতে তিনি নিজেই প্রধান। বিরোধীদের উদ্বেগ নির্বাচনে জালিয়াতি হবে। আগে যেমন হতো ঠিক তেমনি তারা নির্বাচন করার জন্য দাবি করছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপি বলেছে, এমন অবস্থায় তারা নির্বাচন বর্জন করবে। রাজনৈতিক বিরোধে লিপ্ত এই দু’নেত্রীর মধ্যে সব সময় এমন বৈরিতা ছিল না। ১৯৯০ সালে তারা সামরিক স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে প্রকৃতপক্ষেই একজোট হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে তাদের মধ্যে তিক্ত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কারণ, এ দু’দল পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। গত মাসের আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক এ দু’নেত্রী এক দশকের ওপরে একে-অন্যের সঙ্গে কথা বলেননি। গত মাসে তারা যখন কথা বলেছেন তখন সবাই আশা করেছিলেন তাদের বিরোধের অবসান ঘটবে। কিন্তু তাদের কথোপকথনের যে ট্রান্সক্রিপট প্রকাশ পেয়েছে তাতে দেখা যায় সে ঘটনা ঘটেনি। তাই এখন প্রশ্ন এসে যায় বাংলাদেশে কি ঘটতে যাচ্ছে? বাংলাদেশে গণতন্ত্র কি ঝুঁকিতে? শেখ হাসিনা কি নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারবেন? বিভিন্ন দলের মধ্যে এখনও কি সমঝোতা সম্ভব? এসব প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেনÑ আমি মনে করি না যে, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন সম্ভবÑ আপনি যদি জনমত জরিপের দিকে তাকান, স্থানীয় নির্বাচনগুলোর ফলের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন প্রকৃতপক্ষে বিএনপি বেশি জনপ্রিয়। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি না করেন যেখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল অংশ নিতে পারে তাহলে নির্বাচন কোন সমাধান এনে দিতে পারবে না। আপনি যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন ১৯৮৮ সালের নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বর্জন করেছিল। আর ওই নির্বাচনে বিজয়ী সরকার মাত্র দু’ বছর ক্ষমতায় ছিল। আপনি যদি ১৯৯৬ সালের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছিল। আর সে সময় নির্বাচিত সরকার মাত্র কয়েক মাস টিকে ছিল।

শেয়ার করুন