চলমান য় যথাযথ কর্তব্যপালনে পুলিশের মধ্যে এখন গা-ছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক জেলায়ই পুলিশ আগের মতো ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে চাইছে না। তাদের এই শিথিলতার কারণে বাড়ছে হামলা-সহিংসতা-ভাঙচুর-জ্বালাও-পোড়াও। ককটেল বিস্ফোরণে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। এ অবস্থায় সহিংসতা মোকাবিলায় ঢাকার বাইরের অনেক জেলা প্রশাসন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সহায়তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে। টানা য় অনেক জেলাতেই এখন কাহিল হয়ে পড়েছে পুলিশ। গত ২ দিনের অবরোধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের শতাধিক সদস্য আহত হয়েছেন।
সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সমন্বয় সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেলের প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, আমরা পুরো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরে রেখেছি। এখন পর্যন্ত পুলিশের শিথিলতার খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়াবহতা বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হচ্ছে নির্বাচন-সামগ্রীও। এ অবস্থায় সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের সভা আহ্বান করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসি। বৈঠক শেষে তার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, চলমান বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে পুলিশ সমর্থ, নাকি অন্য বাহিনীর প্রয়োজন আছে? এ প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এখনকার বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে অন্য বাহিনীর প্রয়োজন আছে কি না, সেটা নির্ধারণ করবে ইসি। তবে নির্বাচনে সহিংসতা প্রতিরোধে ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা শতভাগ কঠোর অবস্থানে আছি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জসহ প্রায় ৩০টি জেলায় রাজনৈতিক সহিংসতা বিপজ্জনক রূপ ধারণ করেছে।
এসব জেলায় জামায়াত-শিবিরসহ ১৮-দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। এসব জেলায় প্রায় প্রতিদিনই সহিংস আক্রমণ চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তাদের আক্রমণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশও। এসব জেলাসহ সারা দেশে গত এক বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় পুলিশের ১২ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬ শতাধিক। তাদের মধ্যে পুলিশের ২ শতাধিক সদস্যকে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তাদের অনেকেই এখনও হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। এখনও পুলিশের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের শিথিলতার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে ১৬৪ মাইল মহাসড়কের শেষ ২৩ মাইল যানবাহনচালকদের কাছে পরিণত হয়েছে আতঙ্কের এলাকায়। গত দেড় মাসে অন্তত ১৫ দিন মহাসড়কের ওই অংশে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাণ্ডব চালিয়েছে। এসব ঘটনায় ৪ শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ওই মহাসড়কই নয়, ঢাকার বাইরে অনেক জেলাতেই অনুরূপভাবে ধারাবাহিক তাণ্ডব চালাচ্ছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পুলিশের কর্তব্য পালনে গাফিলতির কারণেই গত মঙ্গলবার অবরোধকালে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কতব্য পালনে শৈথিল্য প্রদর্শনের অভিযোগে গতকাল পুলিশের ৫ সদস্যকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হক।
শুধু বগুড়ার এ ঘটনাতেই নয়, পুলিশের শিথিলতার কারণে দেশের অনেক জেলাতেই ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটছে।
সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে সামনের দিনগুলোয় পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরসহ ১৮-দলীয় নেতাকর্মীদের আক্রমণ আরও বাড়তে পারে। তখন কর্তব্যপালনে পুলিশ কতটা ঝুঁকি নেবে, সে বিষয়টি ভাবাচ্ছে সরকারকে। পুলিশের অনেক সদস্যই এখন অনেকটা নিরপেক্ষ ভূমিকায় চলে গেছে। যে কারণে এক মাস আগেও পুলিশকে যেভাবে জীবনবাজি রেখে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে, এখন সেই পুলিশ নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে গা-ছাড়া ভাব দেখাচ্ছে।