ক্লদিও নানকুফিলের জন্ম আর্জেন্টিনায়। বয়স আট বছর। ‘জাদুকরী’ ফুটবল প্রতিভার জন্য এরই মধ্যে ওকে নিজেদের করে নেওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে স্পেনের দুই শীর্ষ ক্লাব বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। ‘নতুন মেসি’ নিয়ে এত এত খবর বেরোয়, সেটাতে আসলে এখন আর চমক নেই। তবে ক্লদিওর খবরটায় চোখ ফেরাতে হচ্ছে। তাকে নিয়ে বিবিসির মতো সংবাদমাধ্যম খবর করেছে বলেই নয়, ক্লদিওর জীবনের সঙ্গে মিল আছে মেসির জীবনের গল্পটার।
এই বিস্ময়-প্রতিভার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসির মতো ইংল্যান্ডের শীর্ষ দুই ক্লাবও। শিশুটিকে তুলনা করা হচ্ছে বার্সেলোনা মহাতারকা লিওনেল মেসির সঙ্গে। ওকে বলা হয় ‘মেসি অব দ্য স্নোজ’।
নিছক তুলনা নয়, বিস্ময়-শিশুটির গল্পটা ঠিক মেসির মতোই। ছোটবেলায় আর্জেন্টাইন জাদুকরের শরীরে গ্রোথ হরমোনের অভাব দেখা দিয়েছিল। স্বাভাবিক শিশুর মতো শারীরিক বৃদ্ধি হচ্ছিল না বলে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটাই যেন ফিকে হয়ে উঠছিল। সেটা হয়নি বার্সেলোনা হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে। অবিশ্বাস্য ফুটবলনৈপুণ্য দেখিয়ে বার্সার দৃষ্টি কেড়েছে ছোট্ট ক্লদিওও। হরমোনের সমস্যা রয়েছে তারও! চলছে ব্যয়বহুল চিকিত্সা।
মাত্র চার বছর বয়সে নিজের ফুটবল প্রতিভায় সবাইকে মুগ্ধ করে ক্লদিও। আর্জেন্টিনার মার্টিন গোমেজ ক্লাবের হয়ে খেলে সে। এই মুহূর্তে বার্সেলোনা-ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মানুয়েল ওতেরো বলেছেন, ‘বড়দিনের ছুটি কাটিয়ে স্পেনের তিনটি ক্লাবে ট্রায়াল দিতে যাবে নানকুফিল। ক্লাবগুলো কী প্রস্তাব দেয়, এর ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’
ক্লদিওর অবস্থাটা মেসির মতোই বলে জানা গেছে মার্টিন গোমেজের সভাপতি মার্সেলো এরনালজের কাছ থেকেই, ‘ও শারীরিকভাবে ছোটখাটো। ছোটবেলায় মেসির যেমন হরমোনজনিত সমস্যা ছিল, নানকুফিলেরও একই সমস্যা আছে। ওর চিকিত্সা চলছে। চার বছর বয়সে খেলার শুরুর সময় অন্য শিশুদের সঙ্গে ওর পার্থক্যটা স্পষ্ট ছিল। ওই বয়সেই সে পায়ের দারুণ সব কারুকাজ, শট নেওয়া ও গোল করতে পারত।’ ক্লদিওর মা ভিভিয়ানা বলেন, ‘আমরা ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এসব করো কীভাবে?’ সে বলে, ‘কীভাবে খেলি, আমি জানি না। আমার পা এমনি এমনি খেলে।’
শরীরে গ্রোথ হরমোনের অভাব ধরা পড়ার সময় মেসির বয়স ছিল ১১। চিকিত্সা বাবদ প্রতি মাসে মেসির প্রয়োজন ছিল ৯০০ ডলার। ওই সময় আর্জেন্টিনা ছিল চরম অর্থ-সংকটে। তা ছাড়া কোনো ক্লাবই মেসির পেছনে এত অর্থ খরচে আগ্রহী ছিল না। আর্জেন্টিনার চিকিত্সকেরা আশঙ্কা করেছিলেন, গ্রোথ হরমোনের অভাবের কারণে মেসি বড় জোর চার ফুট সাত ইঞ্চি লম্বা হতে পারেন।
কিন্তু মেসির উন্নত চিকিত্সা নিশ্চিত করতে ক্লাবের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ খরচ করে বার্সা। যার ফল, আজকের মেসি—উচ্চতায় পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি। জীবনের শুরুতেই ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আশঙ্কায় পড়া সেদিনের ছোট্ট ছেলেটি এখন বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন। আর্জেন্টিনার আরেক বিস্ময় শিশু ক্লদিওও যে একদিন মেসির মতো ফুটবল বিশ্ব মাতাবে না, কে জানে!