জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমদ বলেছেন, এরশাদ জাতীয় পার্টির পিতৃত্ব দাবি করতে পারেন না। গতকাল বুধবার প্রথম আলো ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, অনেকে মনে করে অর্থ এবং একটি ‘ভিনদেশের’ চাপে পড়ে এরশাদ ‘তথাকথিত সর্বদলীয়’ সরকারে যোগ দিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি এরশাদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ শুরু করবেন। আগামীকাল শুক্রবার তাঁর হাসপাতাল ছাড়ার কথা রয়েছে।
এরশাদকে উদ্দেশ করে কাজী জাফর বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি বলেছেন, “হু ইজ কাজী জাফর? আই এম দি ফাদার অফ জাতীয় পার্টি।” আমি তাঁকে প্রশ্ন করতে চাই, হু ইজ এরশাদ? এরশাদ সবকিছুর পিতৃত্ব দাবি করতে পারেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির পিতৃত্ব তিনি দাবি করতে পারেন না।’ কাজী জাফর এরশাদকে ভদ্র ভাষায় কথা বলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই এরশাদ চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও পরে রাষ্ট্রপতি হতে পেরেছিলেন। জাতীয় পার্টি যখন গঠন করা হয়, তখনও এরশাদ চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এমনকি তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদও ছিল না। কাজী জাফরের দাবি, ১৮ দফার ভিত্তিতে তিনি, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, রিয়াজউদ্দিন ভোলা, শাহ মোয়াজ্জেম, শামসুল হুদা, এম এ মতিন, মিজানুর রহমান চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রথমে জাতীয় ফ্রন্ট এবং পরে জাতীয় পার্টি গঠন করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘হোয়াট হি সে, ডাজ নট ম্যাটার। হোয়াট আই সে, ম্যাটারস। হু ইজ কাজী জাফর? আই এম দি ফাদার অফ জাতীয় পার্টি?’
কাজী জাফর আহমদ বলেন, এরশাদ যে ডিগবাজি খেয়েছেন, উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন অর্থ ও ভিনদেশি একটি রাষ্ট্রের চাপে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছেন এরশাদ। দেশটির প্রভাব এতটাই যে চীন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে তারা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ ও স্বাধীন দেখতে চায়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কাজী জাফর যে কথাটি ভাবছেন তা হলো এরশাদ মহাজোটকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন আসলে নিজের লাভের জন্য। সে কারণেই এখন নির্বাচনকালীন সরকারে কাজী জাফরের ভাষায়, ‘সাত ভাই চম্পা’ আশ্রয় পেয়েছেন। তাঁর ধারণা, অনেক দিন ধরেই সরকার দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টিকে দলে টানছিল। মহাজোট ছেড়ে মহাজোটকে লাভবান করতেই এরশাদ ‘গণদাবি’ উপেক্ষা করে নির্বাচনে গেছেন বলে অভিযোগ করেন কাজী জাফর। জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণে তাঁর ভাষায় একতরফা নির্বাচন কিছুটা বৈধতা পায়।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ঠিক কী ‘জিহাদ’ করবেন জানতে চাইলে কাজী জাফর বলেন, ‘আই উইল ফাইট অন।’ কিন্তু তিনি দল ভাঙবেন কি না, তৃণমূলের নেতারা কী করবেন তার কোনো সুস্পষ্ট জবাব দেননি কাজী জাফর। বারবার শুধু ‘সর্বদলীয় সরকারে’ কীভাবে সাত মন্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করার সমালোচনা করেন।