নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়ে ১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকার মাঠে না নামলেও তৃণমূলের নেতারা রয়েছেন মাঠে। আর তৃণমূলের চাপেই অবরোধ কর্মসূচির সময় বাড়ানো হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবরোধ লাগাতার দেওয়ারও চাপ আসছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারাও চিন্তা ভাবনা করছেন। সরকারের একতরফা নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখান করে মঙ্গলবার থেকে অবরোধ কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে মাঠে নেমেছেন ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে ১৫ জনের প্রাণহানিও ঘটেছে ঢাকার বাইরে। কিন্তু ঘুম ভাঙছে না কেন্দ্রীয় নেতাদের। দলের হাই কমান্ড থেকে বার বার নির্দেশ সত্ত্বেও গা বাঁচিয়ে ঘরেই রয়েছেন বাঘা বাঘা নেতারা। এ অবস্থায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষে বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
জানা যায়, সংবাদ সম্মেলনের আগে থেকেই রিজভীর ওপর সারা দেশ থেকে তৃণমূলের নেতারা চাপ দিতে থাকেন অবরোধ বাড়াতে হবে। তাদের বক্তব্য নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো হয়েছে। জেল জুলুম, গুলি, হামলা উপেক্ষা করে তারা মাঠে রয়েছেন। এ অবস্থায় কর্মসূচি শিথিল করা হলে পরবর্তীতে কর্মীদের মাঠে নামানো যাবে না। সেজন্য অবরোধ কর্মসূচি বাড়াতে হবে। এই চাপে প্রথম দফায় ১২ ঘণ্টা বাড়িয়ে অবরোধ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়।
পরবর্তীতে তৃণমূলের চাপের কথা জানতে পারেন জোটনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনিও নির্দেশ দেন অবরোধ আরও বাড়িয়ে দেওয়ার। রাতে আবারও ডাকা হয় সংবাদ সম্মেলন। রাত ১১টার দিকে রুহুল কবির রিজভী আবারও অবরোধের সময় বাড়িয়ে করেন শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত।
জানা যায়, জুম্মার নামাজ ও গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি থাকায় শুক্রবার বন্ধ রেখে এই কর্মসূচি আবারও শনিবার থেকে শুরু হতে পারে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে আর ছাড় দিতে চাচ্ছে না তারা।
এদিকে, বুধবার অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঠানো বিবৃতিতে ১৮ দলীয় জোটের মাঠে থাকা একমাত্র দল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান হুমকি দেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
দেশের বিভিন্ন জেলার নির্বাচনী কার্যালয় ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে নির্বাচন কার্যালয়গুলো আরও আক্রান্ত হবে। শোনা যাচ্ছে আগামী সোমবার নির্বাচন কমিশন এবং সারা দেশে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে কেন্দ্র থেকে।
এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সরকার নমনীয় না হলে অবরোধ লাগাতার দেওয়া হতে পারে।
বুধবার রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতার আগেই তফসিল ঘোষণা করায় সারা দেশে প্রতিরোধ-প্রতিবাদের দাবানল জ্বলে উঠেছে। এর জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনই দায়ী।’ তিনি অভিযোগ করেন, সরকার পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় ক্যাডার বাহিনী বিরোধী দল দমনে মাঠে নামিয়েছে।
রিজভী দাবি করেন, গত দুই দিনের অবরোধে সারাদেশে বিরোধী জোটের আট নেতাকর্মী নিহত, ৮৫০ জনের বেশি গ্রেফতার এবং দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। জুলুম নির্যাতন চালিয়ে পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশেও এর অনেক উদাহরণ আছে। এই সরকার যেভাবে পুলিশ দিয়ে গুলি করে মানুষ মারছে এরও একদিন অবসান হবে। সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে।’
শরিক দলগুলো নিরব
সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮টি দল আন্দোলন করলেও শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোনো দলের নেতাকর্মীদের এখন পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি। এসব দলের কোনো নেতা ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে মিছিল সমাবেশ বা পিকেটিং এ নেমেছেন এমন কোনো খবরও পাওয়া যায়নি।