রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশি, বিদেশি, যৌথ সব ধরনের বিনিয়োগ প্রস্তাব আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। পঞ্জিকাবর্ষ অনুযায়ী ২০১১ সালে যেখানে বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছিল ১৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১২ সালে সেখানে নিবন্ধন হয় ৮৬৯ কোটি ১৮ লাখ ডলার এবং চলতি বছরের ১০ মাসে নিবন্ধন হয়েছে ৬৮১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। দেশের রাজনৈতিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে গত বছরের চেয়েও এবার কম বিনিয়োগ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব কমার হার আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের মধ্যে গত মাস অক্টোবরে সর্বনিু দুই কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে। এর আগে গত আগস্টে তিন কোটি ডলার এবং সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ১৯৩ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। তবে গত মাসে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের রাজনীতির গতিপথ দেখে সমাধানের কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচন করা গেলেও তাতে সহিংসতা বন্ধ হবে না। ফলে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে মারাত্মকভাবে। বিনিয়োগকারীরা এখন একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ চেয়ে অপেক্ষা করছেন। নির্বাচন পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা নতুন উদ্যমে বিনিয়োগে নামবেন বলে উদ্যোক্তারা জানান। বিনিয়োগ বোর্ড সূত্র জানায়, এখন যে প্রস্তাব নিবন্ধিত হচ্ছে তা বিনিয়োগের বীজ বপন। এ প্রস্তাব অনুযায়ী কয়েক মাস পরে প্রকৃত বিনিয়োগ হবে। এখন যে প্রস্তাব হচ্ছে আগামী বছর নতুন সরকারের আমলে তার ফলাফল পাওয়া যাবে। তখন বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকার পরিবর্তন হলেও প্রস্তাবের তুলনায় বিনিয়োগ কম হওয়ার কোনো নজির নেই বলে মনে করেন বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের পর থেকেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন কমতে থাকে।
২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে নিবন্ধন কমে প্রায় ৩৭ শতাংশ। চলতি বছরেও গত বছরের চেয়ে বেশি হবে না; বরং আরো কমার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ১০ মাসে যে হারে নিবন্ধন হয়েছে সেই হারে বাকি দুই মাস নিবন্ধন হলেও মোট নিবন্ধন দাঁড়াবে ৮১৮ কোটি ডলার, যা গত বছরের চেয়ে ৫৫ কোটি ডলার কম। এদিকে গত ১০ মাসে বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ২৫৪ কোটি ডলার। গত বছর নিবন্ধন হয় ২৬১ কোটি ১৩ লাখ এবং ২০১১ সালে নিবন্ধন হয় ৬৪৪ কোটি ৮১ লাখ ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব। অর্থাৎ ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে স্থানীয় বিনিয়োগেও ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে নিবন্ধন প্রস্তাব কমে ১৭ শতাংশ। গত ১০ মাসে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে ৪২৭ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার। এ হারে বাকি দুই মাসেও প্রস্তাব নিবন্ধন হলে মোট নিবন্ধন হবে ৫১৩ কোটি ডলার। অথচ গত বছরেও নিবন্ধন হয়েছে ৬০৮ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম মানবকণ্ঠকে বলেন, প্রতি নির্বাচনের বছরই বিনিয়োগ কিছুটা কমে যায়। তবে এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনীতিকদেরই সচেতন হতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে অস্থিরতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, বর্তমান অবস্থায় উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসলে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করবেন বলে তিনি মনে করেন। তবে বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, এখন পর্যন্ত বিনিয়োগের ট্রেন সচল রয়েছে। বছর শেষে গত বছরের চেয়ে বেশি না হলেও বিনিয়োগ প্রস্তাব কম হবে না। তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগ কমে যাবে বলেও তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, দেশে ব্যবসা শুরু করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও এটি এসেছে। সুতরাং বিনিয়োগে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এখন সময়ের ব্যাপার। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিরতার কোনো বিকল্প নেই।