তারানকো, ওয়ারসি আবার আসছেন

0
144
Print Friendly, PDF & Email

চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আগামী মাসের প্রথমার্ধে আবার ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথবিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি। নির্বাচনের প্রাক্কালে এই সফরে তাঁরা প্রধান রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপ ও নির্বাচনমুখী হতে উৎসাহিত করাই তাঁদের সফরের লক্ষ্য বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।

অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো জাতিসংঘের রাজনৈতিক শাখার প্রধান। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত হিসেবে তিনি ঢাকা সফর করবেন। আগামী ৬ ডিসেম্বর তাঁর এসে পৌঁছার কথা। জানা গেছে, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নিল ওয়াকার গতকাল বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারানকোর সম্ভাব্য সফর সম্পর্কে জানান। এরপর সন্ধ্যায় নিল ওয়াকার ঢাকার গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্ভাব্য সফরের কথা জানিয়েছেন।

নির্বাচন প্রস্তুতি দেখতে গত ডিসেম্বর ও মে মাসে তারানকো দুই দফায় বাংলাদেশ সফর করেন। আগামী মাসে এলে সেটি হবে প্রায় এক বছরের মধ্যে তাঁর তৃতীয় বাংলাদেশ সফর। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক সংকট যাতে না হয় সে জন্য তিনি কয়েক বছর ধরেই সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বান কি মুন নিজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর তারানকোও প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিবদের এই আহ্বান জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরো জানায়, গত ডিসেম্বর ও মে মাসে তারানকোর দুই দফা ঢাকা সফরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। সফর শেষে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনে যাবে না- এমন কথা কোনো দলই তাঁকে বলেনি। দ্বিতীয় দফা সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে তারানকো সংলাপের তাগিদ দিয়ে বলেছিলেন, সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে।

জানা গেছে, গত মে মাসে ঢাকা সফরকালে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তারানকো। কিন্তু সরকার তাঁকে অনুমতি দেয়নি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, আসন্ন ঢাকা সফরে তারানকো আগের মতোই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে তাদের (দলগুলোর) প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবেন। সরকারের সচিব বা সমপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় স্থান পেতে পারে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও কারিগরি সহায়তার মতো বিষয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের দুই দফা সফরে তারানকো সংকট সমাধানে জাতিসংঘের কোনো ফর্মুলা নিয়ে আসেননি, এবারও নিশ্চয়ই আসবেন না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ না চাইলে কোনো ফর্মুলা দেওয়ার সুযোগ জাতিসংঘের নেই। তারানকো আবারও দেশ ও জনগণের স্বার্থে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে উৎসাহিত করতে পারেন।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি আগামী ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় আসবেন। ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন তাঁর সম্ভাব্য সফরের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যারোনেস ওয়ারসি ঢাকা সফরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।

গত ৩ নভেম্বর ব্যারোনেস ওয়ারসির আসার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। তিনি গত এপ্রিল মাসে ঢাকা সফর করেছিলেন। সে সময় তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের তাগিদ দেন। এ ছাড়া তিনি সে সময় কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করে বরং ভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

তারানকো ও ওয়ারসি তাঁদের সফরে কত দিন বাংলাদেশে অবস্থান করবেন সে বিষয়টি কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করতে পারেনি।

শেয়ার করুন