এরশাদের ওপর চটেছেন স্বজনরা

0
137
Print Friendly, PDF & Email

আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ ( সদর ও গঙ্গাচড়া) আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে এবার পারিবারিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সংসদীয় এ আসনের বর্তমান সদস্য (এমপি) এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফকে মনোনয়ন না দিয়ে বহিরাগত অন্য এক নেতাকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্বজনদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন জাপা চেয়ারম্যান।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র ভীষণ রুষ্ট হয়েছেন জাপা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেন লালুসহ অন্য স্বজনরা। এরশাদের ভাতিজা আসিফ এমপি দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রংপুর-১ আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে রংপুরে অবস্থানকারী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এরশাদের ছোট ভাই মোজাম্মেল হক লালুর বড় ছেলে এমপি আফিস বাংলামেইলকে বলেন, ‘বড়আব্বা (এরশাদ) কেন জানি আমার ওপর নাখোশ হয়েছেন। রংপুর-১ আসন থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না বলে জানতে পেরেছি। দলেরই অন্য এক নেতাকে তিনি মনোনয়ন দেবেন।’

আসিফ এমপি জানান, বড়আব্বাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করলেও তার কোনো কথা শুনতে তিনি রাজি হননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সদরের ৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-১ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে বিগত সব নির্বাচনে জাপা প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছেন। জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ নিজেও এ আসনে দুই বার জয়ী হয়েছেন।

এছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র সাবেক জাপা নেতা বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা শরফ উদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু, জাপার জেলা সভাপতি মশিয়ার রহমান রাঙ্গাও এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সর্বশেষ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফ।

মজার ব্যাপার হচ্ছে- ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ আসনে যারাই এমপি হয়েছেন তারা কেউই স্থানীয় অধিবাসী নন, ছিলেন বহিরাগত। এরশাদের ইমেজকে পুঁজি করেই তারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বলে মনে করেন সর্বস্তরের মানুষ।

এবারও জাপার বহিরাগত কোনো নেতাকে এ আসনে মনোনয়ন দেবার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন এরশাদের স্বজনরাও। কয়েকদিন আগে বিষয়টি সাধারণ মানুষের কান পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

ঘটনা জানাজানি হলে বর্তমান জাপা এমপি আসিফ শেষ চেষ্টা হিসেবে তার বড় আব্বা এরশাদের সঙ্গে ঢাকার বাসভবনে দেখা করতে যান। সেসময় ভাতিজা আসিফকে মনোনয়ন দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন বড় আব্বা এরশাদ।

সূত্রমতে, এ ঘটনার পর এরশাদের রংপুরের পৈত্রিকনিবাস স্কাইভিউ বাসায় স্বজনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মনোনয়ন না পাওয়ার কারণ উল্লেখ করে এমপি আসিফ দলের কিছু নেতাকে দায়ি করে বলেন, ‘কিছু নেতা বড় আব্বাকে (এরশাদ) ভুল বুঝিয়েছেন।’ দলে নিজের অবদানের কথা তুলে ধরে এমপি আসিফ বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছরে রংপুর-১ আসনের নির্বাচনী এলাকায় ৮০টি ওয়ার্ডে জাপার কমিটি করেছি। সম্মেলনের মাধ্যমে সব কমিটি করেছি। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নও করেছি।’

এমপি আসিফ বলেন, ‘এরপরেও কেন মনোনয়ন দেয়া হবে না তা বুঝতে পারছি না। সেজন্য আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তবে এ ব্যাপারে জানতে এরশাদের ছোট ভাই লালুসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এরশাদের এক পারিবারিক সদস্য জানান, রওশন এরশাদ তার কাছের এক ব্যক্তিকে রংপুর-১ আসনে মনোনয়ন দেবার জন্য এরশাদকে চাপ সৃষ্টি করেন। এ কারণে শেষ পর্যন্ত এরশাদ সেই নেতাকেই মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে, রংপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছে গঙ্গাচড়া উপজেলা জাপা সভাপতি সামসুল আলম। তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে জাতীয় পার্টি করছি। এলাকাবাসী দাবি তুলেছে এবার স্থানীয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার জন্য। এ জন্য আশা করছি জাপা চেয়ারম্যান আমাকেই মনোনয়ন দেবেন।

শত টানাপোড়েনের মধ্যে রংপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে জাপা চেয়ারম্যানের পরিবারিক টানাপোড়েন কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখার জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

শেয়ার করুন