সমঝোতা ছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে তা বর্জন করবে দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে ঘোষিত সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখান করেছে অধিকাংশ দল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মহাজোটের বাইরে মাত্র একটি দল ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচন পদ্ধতিতে’ অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের জোটসহ জোটের বাইরের আটটি রাজনৈতিক দল এর মধ্যে ‘একদলীয় নির্বাচনে’ অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ১৮ দলের জোটের বাইরের কয়েকটি দল এর মধ্যে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখান করেছে। আরও কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা শীগগিরই দেবেন বলে সূত্র জানায়।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০। এসব দলের মধ্যে ১৪টি আছে মহাজোটে। আর ১৮টি দল আছে জোটে। এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি মহাজোটে নেই বলে এরশাদ দাবি করলেও দলটি মূলত মহাজোটে এখনো আছে। মহাজোটের সব দলসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর ১৮ দলের সব দলসহ ২৫টি দল একদলীয় নির্বাচনের বিপক্ষে।
১৮ দলের জোটে নেই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, কাদের সিদ্দিকির কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এ তিন দলই গতকাল সোমবার ঘোষিত দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে। সমঝোতা না হলে, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নিলে দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথাও জানিয়ে দেয়।
এছাড়া ১৪ দলের মহাজোট বা ১৮ দলের জোটে নেই বামদল সিপিবি। এ দলও আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের ঘোষনা দিয়েছে। দলটি মনে করছে ‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে একতরফা প্রহসনের নির্বাচন।’ আজ মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তাই নির্বাচন বয়কটের এ ঘোষণা দেন। একই দিন তিনটি বামদলের সমন্বয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক বামমোর্চাও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়।
তবে ১৪ দলের মহাজোটের বাইরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। মঞ্জুকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করা হয়েছে।
অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে ১৮ দলের জোট ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেয়। জোটের ডাকা অবরোধের আজ মঙ্গলবার প্রথম দিনে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথসহ দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা, কুমিল্লার লাকসাম, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় সহিংসতায় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ পাঁচজন নিহত হন।
বগুড়া, ফেনী ও চুয়াডাঙ্গায় উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, ময়মনসিংহ, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, চাঁদপুর ও যশোরে রেলপথে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
১৮ দলের জোট আগেই ঘোষণা করেছিল, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই দেশজুড়ে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।