শিবিরের কৌশল নাকি কৌশলে শিবির ঠেকানো!

0
190
Print Friendly, PDF & Email

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল স্থগিতের দাবিতে সারা দেশে চলছে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ।

মঙ্গলবার অবরোধের শুরু থেকেই সারা দেশে ব্যাপক ধংশযজ্ঞ চালিয়েছে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। সড়কে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি তারা রেলপথেও চালিয়েছে ব্যপক নাশকতা।

রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষদের সিংহভাগ লোকই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য নির্ভর করে বাসের ওপর। হরতাল-অবরোধের সময়গুলোতে এ বাসই হয়ে ওঠে রীতিমতো একেকটি মৃত্যুফাঁদ। হরতাল বা অবরোধকারীদের অন্যতম লক্ষ্য থাকে বাসে ইট মারা, আগুন ধরিয়ে দেয়া।

হরতাল বা অবরোধের দিনগুলোতে রাজধানীর রাস্তাগুলোতে বাসের সংখ্যা অন্য সাধারণ দিনগুলোর চেয়ে কমই থাকে। গন্তব্যে পৌঁছানোর আশায় মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাসগুলোতে ভ্রমণ করেন। তবে তার জন্যও করতে হয় অপেক্ষা; কখন আসবে বাস, নিয়ে যাবে গন্তব্যে।

অবরোধের প্রথম দিনের এমনই এক ঘটনা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর মানুষ। সবাই-ই অপেক্ষায় আছেন কখন আসবে বাস।

একসময় তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা যাত্রাবাড়ীগামী একটি বাস থামে রাস্তার মোড়ে। ব্যাস, আর একটি মুহূর্তও অপেক্ষা করেননি কেউ। বাসে উঠতেই হবে- এ আশায় ছুটছেন বাসের দরজার কাছে। কে কার আগে বাসে উঠবেন এই প্রতিযোগিতার মধ্যেই সবাই প্রায় থমকে দাঁড়ান। কারণ, বাসের গায়ে যেখানে রুটের নাম লেখা থাকে সেখানে যা লেখা আছে তা দেখতে তারা কেউ-ই অভ্যস্ত নন। রুটের নামের বদলে বাসের গায়ে বড় বড় কালো অক্ষরে লেখা ‘ছাত্রশিবির’।

বাসচালক মুনির এবং হেলপার জয়নালকে জিজ্ঞেস করে এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বিস্মিত যাত্রীরাও আলোচনা করতে থাকেন এ লেখার অর্থ কী? এই যাত্রীরাই জানালেন, তারা একাধিক বাসে ‘ছাত্রশিবির’ বা ‘শিবির’ লেখা দেখেছেন।

তাদের ধারণা, দুটি কারণে বাসের গায়ে এ ধরনের লেখা হতে পারে। এর একটি হলো- জামায়াত বা শিবিরকে সরকার তার প্রশাসন দিয়ে দমিয়ে রাখতে চাইলেও তারা তাদের সংগঠিত রূপ প্রকাশ করবেই। এটাও তাদের আন্দোলনে রাস্তায় থাকার, অস্তিত্ব জানান দেয়ার নয়া কৌশল হতে পারে।

আর দ্বিতীয়টি হলো, বাস সংশ্লিষ্টরাই হয়তো অবরোধের রাস্তায় শিবিরের অতর্কিত আক্রমণ থেকে সহানুভূতি পেতে এ কাজ করে থাকতে পারেন।

যাত্রীদের এমন আলোচনার মাঝেও বারবার যে বিষয়টি মুখ্য হয়ে দেখা দিচ্ছিল তা হলো- বাসের গায়ে শিবির, ছাত্রশিবির লেখার উদ্দেশ্য যাই হোক, তা শিবিরের নয়া কোনো কৌশলই হোক বা শিবির ঠেকানোর কৌশল হোক, প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফেরাটাই আসল ব্যাপার।

চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে সবার কণ্ঠেই শোনা গেল হতাশার একই সুর। একই উৎকণ্ঠা প্রত্যেকের চোখেমুখে। একই প্রশ্ন সবার মুখে- এভাবে আর কত দিন?

শেয়ার করুন