আজ বুধবার দুপুর তিনটার দিকে সচিবালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ প্রায় তিনশ’ কর্মচারী দাবি-দাওয়া নিয়ে জনপ্রশাসন সচিবের দফতরে যান। কর্মচারীরা সচিবের দফতরে ঢোকার আগ মুহূর্তে জনপ্রশাসন সচিব আব্দুস সোবহান সিকদার তড়িঘড়ি করে বাথরুমে ঢুকে পড়েন এবং তার পিওদের বলে রাখেন তিনি নেই- একথা কর্মচারী নেতাদের যাতে জানিয়ে দেয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দল বেঁধে সচিবের দফতরে এলে সচিবের পিওরা তাদের বলেন সচিব নেই। সচিবের কক্ষের দরজা বন্ধ ছিলো। কর্মচারীরা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং একটি স্মারকলিপি দিয়ে যান।
নিক কর্মকর্তা, পার্সোনাল অফিসার, সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, হিসাব রক্ষক, ডাটা এনট্রি/কনট্রোল অপারেটর এবং এমএলএসএসদের যৌথ দাবিনামা রয়েছে এ স্মারকলিপিতে।
জনপ্রশাসন সচিবকে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাহে আলম, সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি সুলতান আহম্মেদ, সচিবালয পার্সোনাল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর সমিতির সভাপতি হান্নান সরদার, অফিস কাম কম্পিউটার অপারেটর সমিতির সভাপতি সালাউদ্দিন, সচিবালয় কম্পিউটার কর্মচারী সমিতির সভাপতি নিজামুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সচিবালয় হিসাব রক্ষণ সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিল্লর রহমান রাশেদ, অফিস কাম কম্পিউটার অপারেটর সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মৃধা, সচিবালয় ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি রহমত উল্ল্যাহ ও সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন বখতিয়ার প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিসহ ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিন দিন বেড়েই চলেছে। দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্রয় ক্ষমতার উর্ধ্বে চলে যাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পার্সোনাল অফিসার, সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (সকল ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাসহ), সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার আপারেটর, ডাটা এনট্রি/কনট্রোল অপারেটরসহ সকল ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী এবং এমএলএসএসগণ দীর্ঘদিন যাবৎ আর্থিক ও প্রশাসনিক সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের প্রশাসনিক কার্যক্রম গতিশীল ও কর্মমূখর রাখার স্বার্থে এবং সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুরাবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে নিম্নে বর্ণিত আর্থিক ও প্রশাসনিক দাবীসমূহ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দাবীসমূহ ঃ ১.(ক) প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পার্সোনাল অফিসারগণ সচিবালয়ের সহকারী সচিব এর মোট পদের (১০০৭-৮০০)=২০৭ পদের ৩৩% হিসেবে অবশিষ্ট ৬৯টি পদ সংরক্ষণ পুর্বক দ্রুত পদোন্নতি প্রদান এবং আনুপাতিকহারে সিনিয়র সহকারী সচিব, উপ-সচিব ও তদুর্ধ পদে পদ সৃষ্টিকরণ; (খ) প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পার্সোনাল অফিসার, সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, সহকারী লাইব্রেরীয়ানসহ সকল ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা হতে ১ম শ্রেণীতে উন্নীতকরণ; (গ) পদোন্নতি প্রাপ্ত সহকারী সচিবদের ক্ষেত্রে নন-ক্যাডার শব্দটি পরিহার করতে হবে ; (ঘ) সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার আপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, সহঃলাইব্রেরীয়ান, ডাটা এনট্রি/কনট্রোল অপারেটর, সুপার, হিসাব রক্ষক, ক্যাশিয়ার সাঁট-লিপিকার-কাম কম্পিউটার অপারেটর, প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারীসহ সকল ৩য় শ্রেণীর পদকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীতকরণসহ বেতন নির্ধারণ এবং (ঙ) এম এল এস এসদের অফিস সহায়ক পদবীসহ বেতন স্কেল ৪৫০০-৯০৯৫/- এ উন্নীতকরণ।
২. (ক) সকল ক্যাডারের পদোন্নতি বঞ্চিত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাগণকে দ্রুত পদোন্নতি প্রদান ও পদায়ন করা ; (খ) অডিট এ্যান্ড একাউন্টস অফিসারদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুপারিশকৃত (১৫০০০-২৬,২০০/-) টাকার বেতন স্কেল এর ন্যায় সহকারী সচিব/হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা/লাইব্রেরীয়ানসহ সমমানের ১ম শ্রেণীর সকল কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল প্রদান করতে হবে; গ) বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মাচারীদের হয়রানিমুলক বদলি বন্ধ করণ এবং ওএসডি কর্মকর্তাদের দ্রুত পদায়ন করতে হবে।
৩. (ক) ৪র্থ শ্রেণী, ৩য় শ্রেণী, ২য় শ্রেণী ও ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সকল পর্যায়ে সৃষ্ট বেতন বৈষম্য দূরীকরণ এবং প্রয়োজনবোধে নিয়োগবিধি সংশোধন করতে হবে; (খ) ” ল” ডিগ্রীধারী কর্মকর্তাদের একটি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট প্রদান এবং চাকুরীরত অবস্থায় বার কাউন্সিলে পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা।
৪. (ক) হরতাল ও অবরোধ চলাকালীন সময়ে প্রতিদিনের জন্য ১০০০/- (এক হাজার) টাকা ঝুঁকিভাতা প্রদান এবং যাতায়াতের সময় নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা করা ; (খ) সকল ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রদান করা।
৫. (ক) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ন্যায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২০% সচিবালয় ভাতা প্রদান ; (খ) পেনশন ১০০% এবং গ্র্যাচুয়িটি ১ঃ৫০০/= টাকা নির্ধারণ; (গ) সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৭০০/= টাকার স্থলে ৩,০০০/= টাকা প্রদান; এবং (ঘ) সন্তানদের শিক্ষা ভাতা ২০০০/- টাকা নির্ধারণ।
৬. (ক) উপ-সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, সহকারী সচিব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পার্সোনাল অফিসার, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাসহ সকল ১ম ও ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ২৫,০০,০০০/= (পচিঁশ লক্ষ) টাকা সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান ; (খ) সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার আপারেটর, ডাটা এনট্রি /কনট্রোল অপারেটর, হিসাব রক্ষক, প্রধান সহকারীসহ সকল ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীগণকে ২০,০০,০০০/-(বিশ লক্ষ) টাকা এবং এম এল এস এসগণকে ১৫,০০,০০০/= (পনের লক্ষ) টাকা সুদমুক্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান।
(ক) উন্নয়ন প্রকল্প হতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা-২০০৫ অবিলম্বে হালনাগাদ করতে হবে। (খ) সকল ডিপ্লোমাধারীগণকে ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীতকরণসহ বেতন স্কেল নির্ধারণ; (গ) সকল কর্মচারীদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালুকরণ এবং (ঘ) ওয়ার্ক চার্জ কর্মচারীগণকে নিয়মিত করণ।