গণফোরাম সভাপতি, সংবিধান বিষেশজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের রাজধানীর মিন্টু রোডের বাসায় আজ মঙ্গলবার রাতে একটি ‘গোপন বৈঠক’ হয়। রাত এগারোটার দিকে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সুশীল সমাজের সদস্য বলে পরিচিত প্রায় পঁচিশ জন অংশ নেন। তাদের মধ্যে বহুল প্রচারিত একটি বাংলা দৈনিকের সম্পাদকও ছিলেন। ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি দুই রাষ্ট্রদূতের উদ্যোগে ওই বৈঠকের আয়োজন হয় বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ‘একতরফা নির্বাচন ঠেকানো’ ও ‘বিদ্যামান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে’ বৈঠকের আয়োজন হয় বলে সূত্র উল্লেখ করে।
রাতের বৈঠকের আগে ড. কামালের নেতৃত্বে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গেও দেখা করেন। তারা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তার হস্তক্ষেপ চান। সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান, মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল, সাবেক উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরি, আইনজীবি শাহদিন মালিক আর নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’র বদিউল আলম মজুমদার ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন।
অভিযোগ আছে, বিদেশি এক রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে ড. কামালসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা করতে যান। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে ড. কামাল সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সচেষ্ট আছেন ও থাকবেন।’ এর আগে গত ২০ নভেম্বর বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিএনপির আস্থাভাজন। এজন্যই বিরোধীদল তার কাছে গেছে।’
অন্যদিকে মঙ্গলবার রাতে ড. কামালের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেয়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছয় জনের ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যপন্থী’ বলে পরিচিত আছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ‘আওয়ামী লীগঘেষাঁ সুশীল’ বলেও পরিচিত। আবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমর্থক বলে পরিচিতও আছেন। ছিলেন ওয়ান ইলেভেনের কট্টর সমর্থক এক শিক্ষাবিদ ও দুই আইনজীবী। যারা তখন রাজনীতি থেকে ‘দুই নেত্রীকে মাইনাসের’ দাবি তোলেছিলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জরুরি অবস্থার সরকার গ্রেফতার করার বিষয়টিকেও সমর্থন করেন। তাদের মধ্যে একজন খালেদা জিয়াকে জরুরি অবস্থার সরকার গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে অশ্লীল ঠাট্টা করে ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারে উপসম্পাদকীয় লিখেন। রাতের বৈঠকের সত্যতা জানতে নানাভাবে চেষ্টা করেও ড. কামালের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি দুই রাষ্ট্রদূতের উদ্যোগে ড. কামালের বাসায় রাতে বৈঠকটি হয়। দুই রাষ্ট্রদূতই বিএনপিকে ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনটি মেনে নিতে পারছেন না। তাদের মধ্যে এক রাষ্ট্রদূতের দেশ কূটনেতিকভাবে বিএনপি, জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের জোটকে সমর্থন করছে। এছাড়া ‘নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে মহাজোট সরকারের অপমানের’ বিষয়টি তার রাষ্ট্র সমর্থন করে না। অন্য রাষ্ট্রদূতের দেশ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে। এ বিষয়ে দেশটি কৌশলে একাধিকবার বক্তব্যও দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ওয়ান ইলেভেনের আগেও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে গভীর রাতে বৈঠক হতো। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তখনকার রাষ্ট্রদূতের উদ্যোগে বৈঠকগুলো হতো বলে অভিযোগ আছে। তখন একাধিক বৈঠক হয় সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়াত এক উপদেষ্টার রাজধানীর বাসায়।







