বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ক্রমেই কমে যাচ্ছে

0
154
Print Friendly, PDF & Email

অব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক বাজারে সমুদ্র-বাণিজ্য ও জাহাজ ব্যবসায় গুরুতর মন্দা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের অদূরদর্শিতার কারণে সমুদ্রবাণিজ্যে কমে যাচ্ছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ। কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে বাংলাদেশি মালিকরা তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরনো জাহাজ নিয়ে বহুদূর পিছিয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে আধুনিক জাহাজ নিয়ে বিদেশি মালিকরা পণ্য পরিবহনের বাজার নিজেদের দখলে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশি জাহাজ মালিকরা পণ্যের যে পরিমাণ ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করছেন তার কম ভাড়ায় সেইসব পণ্য নিয়ে যাচ্ছে বিদেশি মালিকানাধীন জাহাজ।

একটি বেসরকারি সূত্র মতে, বর্তমানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ৭০। তার মধ্যে ২৮টি জাহাজ চলাচল অনুপযোগী ও স্ক্র্যাপ হওয়ার পথে। ফলে সমুদ্রপথে চলাচলকারী বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ৪২-এ নেমে এসেছে। ২০০৯ সালের জুন মাস নাগাদ নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরে সমুদ্রগামী ২৪টি জাহাজ নিবন্ধিত থাকার কথা জানা যায়। তার মধ্যে একই বছরের শেষ ৬ মাসে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ফ্লিটে যুক্ত হয় ১০টি জাহাজ, ২০১০ সালে যুক্ত হয় ১২টি জাহাজ, ২০১১ সালে যুক্ত হয় ১৯টি জাহাজ, ২০১২ সালে যুক্ত হয় ৪টি এবং ২০১৩ সালে যুক্ত হয় ২টি জাহাজ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসাবে বাতিল হয়ে গেলে সমুদ্রবাণিজ্যে চলাচলের জন্য থাকবে মাত্র ৪০ থেকে ৪২টি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজবহরের জন্য নতুন জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হলেও গত চার বছর ধরে একটিও জাহাজ কেনা হয়নি।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) ১৩টি জাহাজের মধ্যে ৫টি জাহাজ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রি তালিকায় উঠেছে। এই জাহাজগুলো হচ্ছে, বাংলার মুখ, বাংলার ঊর্মি, বাংলার মায়া, বাংলার গৌরব ও বাংলার রবি। বাদবাকী ৮টি জাহাজের মধ্যে ৩টি জাহাজে চলছে মেরামতের কাজ। ফলে এগুলো আপাতত: অপারেশনে নেই। মেরামতে থাকা জাহাজগুলো হচ্ছে বাংলার কল্লোল, বাংলার শিখা ও বাংলার মমতা। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মকসুমুল কাদের ইত্তেফাক-কে বলেন, বিএসসির জন্য ৮টি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে জাহাজ কেনার ক্ষেত্রে সরকারি প্রক্রিয়াগত কারণে দেরি হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে বিএসসি’র হাতে রয়েছে চলাচল উপযোগী ৮টি জাহাজ। তার সাথে যুক্ত হবে ৩টি ট্যাংকার ও ৫টি খোলা পণ্যবাহী (বাল্ক ক্যারিয়ার) সহ মোট ৮টি জাহাজ। জাহাজ কেনা হবে বিএসসি’র নিজস্ব টাকা ও বৈদেশিক ঋণের টাকা মিলিয়ে। তিনি জানান, চলতি নভেম্বর মাসেই বিএসসির জাহাজ ‘বাংলার শিখা’ চট্টগ্রাম বন্দর ও মংলা বন্দরে লোকাল ফিডার জাহাজ হিসাবে কন্টেইনার পরিবহন শুরু করবে। পুরনো জাহাজ হিসাবে এটি সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী নয়। এটি আগে খোলা পণ্যবাহী জাহাজ হিসাবে সমুদ্র বাণিজ্যে চলাচল করেছে।

বেসরকারি সংস্থা এইচআরসি’র জাহাজগুলো গত তিন বছর ধরে সমুদ্রপথে চলাচল করছে না। বিভিন্ন জটিলতায় সংস্থাটির ২টি জাহাজ দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে আটক এবং বাদবাকী ৫টি জাহাজ দেশে বসে আছে। সংস্থার পরিচালক খন্দকার সিরাজউদ্দিন আহমদ ইত্তেফাক-কে বলেন, এইচআরসি’র ৮টি জাহাজ আর চলাচল করবে না। এইচআরসি তাদের জাহাজগুলোকে স্ক্র্যাপ ঘোষণা করে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের ব্যক্তি মালিকানাধীন যেসব জাহাজ বিক্রি কিংবা স্ক্র্যাপ হওয়ার পথে তার একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে এমভি হোপ, আতিকুর রহমান, রতন পাল, রতন ফিডালিটি, মেঘনা প্রাইড, রতন পাথ ফাইন্ডার, জিব্রাইল আমিন, ট্রান্স ওশেন-২, এমটি নূর, এমভি মিকাইল, ওয়েস্টার্ন ট্রাভেলার, ও ফাতেমা জাহান।

শেয়ার করুন