নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকায় নতুন করে আর কোন ব্যাচেলরদের কাছে মেস অথবা ফ্ল্যাট ভাড়া না দেয়ার জন্য বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করেছে পুলিশ, এটিএন টাইমসের এমন প্রতিবেদন নিয়ে জনসাধারনের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৩ নভেম্বর শনিবার এটিএন টাইমসে ‘ব্যাচেলরদের কাছে বাড়ি ভাড়া নয়’ নির্দেশ পুলিশের- শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরপরই পুলিশের এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটগুলোতে বিষয়টি নিয়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন অনেক ব্লগার।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে অবিবাহিত যুবকদের কাছে মালিকেরা যেন নতুন করে আর বাসা ভাড়া না দেয় সেজন্য রাজধানীর ৪৯ টি থানা পুলিশকে সার্বিক নজরদারী করতে বলা হয়েছে। রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে এই বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে পুলিশের দুই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এটিএন টাইমসকে জানান, সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি মেস থেকে বিপুল পরিমান ককটেল, বোমা তৈরির বিস্ফোরক ও নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পেট্রোল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন অবিবাহিত যুবক।
ধারণা করা হচ্ছে, ফ্ল্যাট কিংবা মেস ভাড়া নিয়ে তারা নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করতেন। সে কারনেই সদর দপ্তর থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন নতুন করে কোন অবিবাহিত যুবক ফ্ল্যাট কিংবা মেস ভাড়া নিতে না পারে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের সর্বোচ্চ সতর্ক করে দেওয়ার জন্য ৪৯ টি থানাকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জনমনে ব্যাপক আলোড়ন: মিরপুরের একটি মেসে ভাড়া থাকেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তন্ময় হাসান। তিনি বলেন, ‘অবিবাহিতদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিতে মালিকদের নাকি নিষেধ করেছে পুলিশ। এটিএন টাইমস পড়ে বিষয়টি জানতে পেরেছি। পুলিশের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন, আসছে জানুয়ারি মাসে মালিকেরা বাসার ভাড়া বৃদ্ধি করলে আমরা কোথায় যাবো? তারমানে অন্য কোন ফ্ল্যাট কিংবা মেসে যাওয়ার আর বিকল্প উপায় থাকলো না!’
পুলিশের এমন নির্দেশ হাস্যকর মন্তব্য করে তন্ময় বলেন, ‘তারা লোক হাসানোর চেষ্টা করছেন। রাজধানীতে প্রত্যেক নাগরিকের বসবাস করার অধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা মৌলিক অধিকার হরণ করা চেষ্টা চালাচ্ছে। ’
ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল আমীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে কলাবাগানের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করি। বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ায় সামনের জানুয়ারীতে অন্য একটি ফ্ল্যাটে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশের এমন নির্দেশের কারণে অন্য কোথাও বাসা খুঁজে পাচ্ছি না। তাহলে কি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যাবো? সেখানেও তো কর্মসংস্থানের কোন সুযোগ নেই।’
সামাজিক ওয়েবসাইট ফেসবুকে সুমন্ত নামের এক ব্লগার লিখেছেন, ‘পুলিশের এমন নির্দেশকে ধিক্কার জানাই। ’
সামহয়্যার ইন ব্লগে নীল সাগর নামে এক ব্লগার লিখেছেন, ‘রাজধানীতে ফ্ল্যাট কিংবা বাসা ভাড়া না পাওয়ার একটাই অর্থ- এদেশে নাগরিকের কোন মৌলিক অধিকার নেই।’
তোলপাড় প্রশাসনেও !
এটিএন টাইমসে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে ফোন করে অনেকেই জানতে চেয়েছেন । এমন প্রশ্নে অনেক কর্মকর্তা বিব্রত হয়েছেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের এমন নির্দেশে নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন অনেক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা এটিএন টাইমসকে জানান, ‘উর্ধতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বলি হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। অবিবাহিতদের কেন বাসা ভাড়া দেয়া যাবেনা, পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে এমন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। ফলে প্রায়শই যেখানে সেখানে বিব্রত হচ্ছি।’









