গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ সব সময়ই ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে না। তাড়াতাড়ি হোক অথবা বিলম্বে হোক বিএনপি ক্ষমতায় আসবেই। ঢাকায় যে-ই ক্ষমতায় থাকুন না কেন ভারতকে তার সঙ্গেই কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। তাই শুধু এক দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে তা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি সমস্যাসঙ্কুল ফ্যাক্টর হওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ভারতকে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সব সময়ই এ দু’টি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বেলায় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। গতকাল কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ-এ এসব কথা লিখেছেন ভারতের শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিক সুনন্দ কে দত্ত রায়। তিনি কলকাতা ও নয়া দিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। লিখেছেন ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন এবং টাইম ম্যাগাজিনে। সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইট টাইমস পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া, বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে রেখেছেন বিশেষ অবদান। এতে তিনি লিখেছেন, একবার আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাংলোতে চা পানে আপ্যায়িত করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বঙ্গভবনের চেয়ে ক্যান্টনমেন্টের এই বাংলোতে নিজেকে বেশি নিরাপদ মনে করতেন। ওই চা চক্রের সময় তিনি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেন যে, ভারতের কাছ থেকে তিনি সেইসব জিনিস আদায়ে সক্ষম হবেন যা আদায়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা ব্যর্থ হয়েছেন। আমার বন্ধু, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একজন ব্যারিস্টার ও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বিএনপিদলীয় একজন সদস্য। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছে। তিনি বলতেন, স্থানীয় ‘ইন্ডিয়া লবি’র চেয়ে ভারতের সঙ্গে কাজ করা সহজ। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিগবাজি দেয়ায় সেই রকম ক্ষত জাগিয়ে রাখলো এবং সেখান দিয়ে রক্তপাত হতে থাকবে। তাই শেষ সময়ে হলেও বাংলাদেশে নতুন সরকার নির্বাচিত হয়ে আসার আগেই পানি বণ্টন চুক্তি অবশ্যই হওয়া উচিত- যাতে দীর্ঘ মেয়াদে পানির ব্যবহার কিভাবে হবে সে সম্পর্কে একটি মাস্টারপ্ল্যান পাওয়া যায়, একই সঙ্গে পরে কিভাবে পানি বণ্টন হবে তা নিয়ে কাজ করা যায়। পানি নিয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি নতুন সমৃদ্ধ যুগের প্রতিশ্রুতি ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে দিয়েছিলেন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। স্ট্র্যাটেজিক ফোরসাইট গ্রুপের প্রধান সন্দীপ ওয়াসলেকার সমপ্রতি একটি রিপোর্ট সম্পন্ন করেছেন। এর শিরোনাম ‘রিভারস অব পিস: রিস্ট্রাকচারিং ইন্ডিয়া বাংলাদেশ রিলেশন্স’। এতে শোচনীয়ভাবে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, তখন যে জয়েন্ট রিভার্স কমিশন বা যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়েছিল তা এখন জয়েন্ট-ও (যৌথ-ও) নয়, কমিশন-ও নয়। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কাজটি সম্পন্ন করতে সহায়তা দিতে পারেন। এতে সুবিধা ভোগ করতে পারবে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও বাংলাদেশের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ।