মাঠে নামলেই গ্রেফতার

0
171
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের রাজপথের আন্দোলন মোকাবিলায় সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি এলাকায় বিরোধী দলের যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে জোটবদ্ধভাবে মাঠে থাকার জন্য নির্দেশনা গেছে শীর্ষ পর্যায় থেকে। পাশাপাশি জামায়াতপ্রবণ জেলাগুলোতে সহিংসতা সামাল দিতে কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সহিংসতা প্রতিরোধে সীতাকু-ে করা হয়েছে ১০ কমিটি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে আরও কঠোর হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সামনের রাজনৈতিক আন্দোলনে পুলিশ থাকবে সর্বোচ্চ অ্যাকশনে। বিরোধী জোটের নির্বাচন ঠেকানোর সব চেষ্টা নিষ্ফল করে দিতে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের অভিযান চালানো হবে। সূত্র জানায়, বিরোধীরা কর্মসূচি পালনে মাঠে সহিংস হওয়া মাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলামের দেশ অচল করে দেয়ার হুমকির পর সরকার নড়েচড়ে বসেছে। বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে মাঠে থাকার পাল্টা কর্মসূচি নিচ্ছে। আন্দোলন মোকাবিলা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও রাজপথে অবস্থান নেবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্দোলনের নামে সহিংসতার পথ বেছে নিলে বিরোধী দলের সদস্যদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করা হবে। আজ গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের এ অনুষ্ঠান থেকেও নতুন করে আরেক দফা দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, বিরোধী দল আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগও রাজপথ দখলে রাখার কর্মসূচি দেবে। সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে আওয়ামী লীগও অবস্থান নেবে। রাজপথে থেকে একদিকে বিরোধী পক্ষকে প্রতিহত করবে এবং দলের সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাবে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা সহিংসতা চালালে সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। রাজপথে আছে এবং থাকবে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, আবার নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেবে এটা রাষ্ট্রবিরোধী, গণতন্ত্র ও সংবিধান বিরোধী। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল দেশ অচল করার হুমকি দিয়েছেন। নির্বাচন বর্জন করলে উনি নিজেই নিজের দলের মধ্যে অচল হয়ে যাবেন। তখন আন্দোলন করার আর কোনো সময় পাবেন না। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচন প্রতিহত করার ষড়যন্ত্র করা হলে আওয়ামী লীগও বসে থাকবে না। তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। মির্জা ফখরুলের হুমকি প্রসঙ্গে নাসিম বলেন, হুমকিধমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। কেউ হুমকি দিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘরে বসে থাকবেÑ এটা সে দল নয়। নির্বাচনে বাধা দিলে রাজপথেই তাদের প্রতিহত করা হবে। নির্বাচন প্রতিহত করার শক্তি কারও নেই।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে বিএনপি দেশকে অচল করে দিচ্ছে। কিন্তু জনগণ দেশ অচল হতে দেয়নি। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি দেশ অচল করতে চাইলে আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে সে জবাবও দেশের জনগণই দেবে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম রাজপথ থেকে। কোনো আন্দোলন বা হুমকিধমকিকেই আমরা ভয় পাই না। অতীতে বিরোধী দলের হরতালের কর্মসূচিতে রাজপথ যেমন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল, আগামীতেও থাকবে। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুলরা যত জোরেই হুঙ্কার দিক রাজপথে তাদের পাওয়া যাবে না।

সোমবারের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য এবং তফসিল ঘোষণার পর পরই বিএনপির দেশ অচল করে দেয়ার হুমকিতে জনমনে নতুন করে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পাশাপাশি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের ‘জীবন যাবে অথবা তত্ত্বাবধায়ক আসবে’ এমন কঠোর হুশিয়ারি শঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে সৃষ্ট অরাজকতা মোকাবিলাকে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থাগুলো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যে কোনোভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। শনিবার রাতেও পুলিশ সদর দফতরে বিশেষ জরুরি বৈঠক করেছেন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতদের দেয়া হচ্ছে নানা নির্দেশনা। তারই ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। গত দু’দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলেও জানা গেছে। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পর পরই পরিস্থিতি বুঝে বিএনপির আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের নেতাদের ধরতে এরই মধ্যে পুলিশি অভিযান চলছে। যে সব মেসে শিবির কর্মীদের আনাগোনা আছে সেগুলোতে পুলিশ হানা দিতে শুরু করেছে। বিএনপি বা জামায়াত-শিবির যাতে রাস্তায় দাঁড়াতেই না পারে সে লক্ষ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে এন্টি প্রটেকশন কারসহ (এপিসি) নানা ধরনের গোলাবারুদ। নাশকতা দেখলেই পুলিশ প্রয়োজনমতো এগুলো ব্যবহার করবে। এর পাশাপাশি বিজিবিকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে মাঠে নামানো হবে বলে জানা গেছে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনস্বার্থে যা করণীয় পুলিশ তাই করবে। কোনোরকম অরাজকতা মেনে নেয়া হবে না। জানমালের ক্ষতির চেষ্টা করলেই অপরাধের মাত্রা অনুসারে অ্যাকশনে যাবে পুলিশ। আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যরা এর আগে অনেক বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নিজেদের যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠতার প্রমাণ করেছেন। পুলিশ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যারা দায়িত্বে অবহেলা কিংবা পক্ষপাতিত্ব দেখাতে পারেন তাদেরও একটি তালিকা প্রস্তুত করছে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া পুলিশের ঢাকা মহানগরের ৪৯ থানার ওসিকে ডিএমপি সদর দফতর থেকে গত সপ্তাহে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই নির্দেশনায় ওসিদের তাদের নিজ নিজ এলাকার মেসের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়। মেসে বসবাসকারীদের ওপর নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী ও কূটনৈতিকপাড়ায় এরই মধ্যে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।

শেয়ার করুন